সমস্ত লেখাগুলি

সংস্কার-মুক্ত-সমাজ -
মহম্মদ মহসীন
May 20, 2025 | সামাজিক ইস্যু | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

কিছু কিছু কথা আছে, শুনলে হাসি রোখা যায় না। যেমন গ্রামে হবে এক ধর্মসভা। বক্তা কে? একজন মৌলভি মৌলানার নাম, কোন মাদ্রাসায় তার শিক্ষা, কী কী তার ডিগ্রী এইসব বড় বড় অক্ষরে, নীল লাল বেগুনি সবুজে ছাপা। একটা বিশেষণে কিন্তু হাসি আর চেপে রাখা যায় না। সেটি হ'ল,  তার মতো যুক্তিবাদী বক্তা খুবই কম আছে। তার সমস্ত যুক্তিই অকাট্য। কোরাণ হাদিসের বাইরে এক মিলিমিটারও তিনি বেরিয়েছেন, এ অপবাদ তার ঘোরতর প্রতিযোগী মৌলানা মৌলভীরাও করতে পারে না।


 এই হলো যুক্তিবাদ সম্বন্ধে মুসলিম জনসমাজের ধ্যানধারণা।  এবার একটু মুসলিম জনসমাজ থেকে বেরিয়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষিত জনের ভাবনার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক।

 কুসংস্কার দূরীকরণ বলতে তারা কী বোঝেন? ঐ সাপে কাটলে ওঝার কাছে যাওয়া নয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তেলপড়া জলপড়া নয় ডাক্তারের ওষুধ খাওয়াতে হবে। কোন ডাক্তার? এলোপ্যাথি, হোমিয়োপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, চাইনিজ, জাপানিজ, যেকোনও ডাক্তার হলেই চলবে, নামের আগে ডাক্তার লেখা হলেই হলো। জলপড়া, তেলপড়ার মতো হোমিওপ্যাথি যে স্রেফ ওষুধবিহীন চিকিৎসা এইটুকু বললেই সেই সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারিরাও রে রে ক'রে তেড়ে আসে। হোমিও খেয়ে যে তার নিজের, নিজের বাবা-কাকা- দাদু- দিদার কিংবা অপরের বাবা-মা- কাকা-জ্যেঠা কতজনের যে রোগ নিরাময় হয়েছে, তার না কি থই পাওয়া যায় না। 


 কুসংস্কার বলতে আপামর শিক্ষিতজনের চিন্তাস্রোত এমনই গড্ডালিকাপ্রবাহিনী।  কিছু মানুষ আছেন, সমাজে তারা কেউকেটা। এই যেমন সরকারী বিজ্ঞান সংস্থার উচ্চপদাসীন, নামকরা চিকিৎসক, বিজ্ঞান পড়ানো টিচার। তারা সব ধরে ধরে রাস্তায় চলার পথে কালো বেড়াল দেখলে কেন থামতে হয়, পিছন থেকে ডাকলে কেন যেতে নেই, এক শালিক দেখলে কেন কাজ সফল হয় না, ডিম খেয়ে কেন পরীক্ষা দিতে যেতে নেই, গর্বের সাথে  সে সবের বড় বড় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে পাণ্ডিত্য  ফলিয়ে থাকেন। নিজেকে কুসংস্কারহীন, বিজ্ঞানমনস্ক, বিজ্ঞানকর্মী বলে পরিচয় দেন।   এইসব মণীষীগন বিজ্ঞান আন্দোলনের যে কত ক্ষতি করেন তার মাপ পরিমাপ নেই।  বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মেলনে,  জ্যোতিষীর দেওয়া রত্নপাথরের শোভা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতেও এরা নি:সঙ্কোচ। 

  

কেউ কেউ আছেন, একটা বিজ্ঞান সংস্থার কর্ণধার, সর্বেসর্বা, এরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে, গ্যাজেট নিয়ে  ভূত ভগবান শয়তান নিয়ে গবেষণা করেন, নিদেনপক্ষে সেইসব বিজ্ঞানীদের প্রমোট করে থাকেন। এই সব অপবিজ্ঞানের ধ্বজাধারিদের। 

 সমাজে চোর ডাকাত জোচ্চররা ঠিক কতটা ক্ষতি করে তা ঠিক পরিমাপ করতে পারি না, কিন্তু এই স্বার্থান্বেষী বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মীগুলো ভূত-প্রেত-স্বার্থান্বেষীদের বিজ্ঞানকর্মী, বিজ্ঞানানুসন্ধানী বলে সমাজ মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ছলে ভট্টাচাজ্জিগিরি করে   বিজ্ঞান চেতনার পথ থেকে পৃথিবীকে হাজার বছর পিছিয়ে নিয়ে , যাচ্ছে তা কিন্তু নিশ্চয় করে বলা যায়। 

   সমাজমাধ্যমে এইরকম  মুখোশপরা সেলিব্রিটি “কুসংস্কারমুক্ত” মেকি কুসংস্কারবিরোধী লোক বিজ্ঞানমনস্কতা নির্মাণের পথে রঙচঙে দেওয়ালবিশেষ।  কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে হলে এই লোকগুলিকে মোকাবিলা করতে হবে, বিজ্ঞান আন্দোলনে সেটাও এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।


   কুসংস্কারমুক্তির জন্য তাহলে কী চাই? চিকিৎসক হতে হবে? অনেক ডাক্তারকে দেখবেন মাদুলি নিয়ে ঘুরছেন। তিনি নিজে ডাক্তার, অথচ পীরবাবা, মৌলানা-মৌলভীদের দেওয়া মাদুলি পরে বসে আছেন।  তাহলে কি বিজ্ঞানী হতে হবে? নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী বলছেন, কুলদেবতা ঠাকুর তাকে থিসিস যুগিয়ে চলেছে।  তাহলে কি টিচার হতে হবে? টিচাররাও শিশুদের বাগদেবীর আরাধনার উপদেশ দিচ্ছেন।  তাহলে কি হতে হবে?


আমার মনে হয়, পাঠক হতে হবে। ভাল ভাল বই আছে সেগুলি প্রতিনিয়ত পড়তে হবে।  

 আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলেই প্রচুর বই আছে। সেগুলি পড়তে হবে। যার যেখানে সম্পর্ক আছে এইসব বইয়ের সন্ধান দিতে হবে। পড়তে তাগিদ দিতে হবে। শিশুদের তো বাবা-মা- পরিবার-প্রতিবেশী কুশিক্ষা দেয়। কুসংস্কারের আঁচে ধোঁয়া দেয়। শিক্ষিত পরিবারেও এতটুকু বিজ্ঞানমনস্কতার পরিবেশ পরিশীলনের অবকাশ নেই। প্রতিটি পরিবারে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-নবীদের কথা-হাদিসের গল্প গুলো শিশুদের চরিত্রগঠনের দায় চাপিয়ে দিয়ে দায়িত্ব  পালন করে চলেছে। বিষের বীজ এভাবেই অঙ্কুরিত হচ্ছে শিশুমনে। কুসংস্কারমুক্তির জন্য চেতনার চাষ করতে আগে  এইসব  রামকৃষ্ণ হাদিস বিবেকানন্দ নবী সদৃশ আগাছা আমূল তুলে ফেলা দরকার। এ কাজটা খুব জরুরি। কিন্তু আগাছা নিকাশ করা অত সোজা নয়। তাই বিজ্ঞানকর্মীদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশী। 


আমাদের এই কাজটা বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ।  তবু মনে প্রত্যয়, উই শ্যাল ওভারকাম।


অলৌকিক নয়, লৌকিক -
মহম্মদ মহসীন
May 19, 2025 | যুক্তিবাদ | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বাস্তব কথা হলো, এ জগৎ এক বস্তু জগৎ। তবু মানুষ কল্পনা করতে ভালবাসে, কল্পনার এক জগত গড়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। 

 এই মানসিকতাকেই পুঁজি করে পূঁজিবাদীরা তৈরি করেছে এক হাতিয়ার। সেটি হলো ভাববাদ। ভাববাদে ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা, আত্মা, প্রেতাত্মা প্রভৃতি কাল্পনিক জিনিসের অবতারণা করা হয়।  ক্যাপিটালিজমের বহুল প্রচারে সমাজমানসে এইসব আত্মা, ভূত, ভগবান, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি হাবিজাবি কাল্পনিক অস্তিত্বহীন জিনিস বিভিন্ন অস্ত্রের বারংবার ব্যবহারে, বিভিন্নভাবে ব্যবহারে, মানব মনে বিশ্বাসের মুখোশ তৈরি করতে সক্ষম হয়, সফল হয়। মানুষ এসবে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। তার এই বিশ্বাস  দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আত্মিকরণ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ জগৎ যে শুধুই বস্তুজগৎ, এছাড়া অন্য কিছুই নয়, তা বলীষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন প্রবীর ঘোষ।  গত শতকের আটের দশকে লক্ষ বাধাকে যুক্তিবাদের ধারে স্বমহিমায় অতিক্রম করতে পেরেছেন প্রবীর ঘোষ। 

 উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে মানুষকে মানবেতর প্রাণী করে রাখাটা খুব দরকার পড়ে।  এজন্য এইসব কাল্পনিক জিনিস তাদের মনে প্রোথিত করার খুব প্রয়োজন। কিছু কিছু প্রফেট, ধর্ম প্রচারক, ধর্ম প্রণেতা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বস্তুবাদের বিরোধীবাদ প্রচার করে থাকেন যা আসলে ক্যাপিটালিজম দিয়ে শোষণকেই সমর্থন করে চলে।

মুনাফার লোভ চালায় শোষণ। শ্রমিক মানসে যখন জন্ম নেয় সংগ্রামের ইচ্ছার পাখি। অধ্যাত্মবাদ,  অদৃষ্টবাদ, স্বর্গ-নরক-কল্পনা সেই সংগ্রামী পাখীকে থামিয়ে দেয়, উড়তে না দিয়ে বন্দি করে ধর্মের খাঁচায়। শ্রেণিবিহীন সমাজ গড়তে  বিপ্লবের ইচ্ছাকে দমিয়ে দেয় এইসব অধ্যাত্মবাদ। মানুষকে অন্ধ করে দেয়। এক ধরণের জম্বি (zombie) তৈরি করে দেয়। মানুষের শ্রেণিচেতনাবোধ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে এইসব বিরোধীবাদগুলি সেই চেতনাকে মেরে ফেলে চারদিক দিয়ে আক্রমণে। গড়ে উঠতেই দেয় না।

 দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুধাবন করার প্রাথমিক কথাই হলো, এ জগৎ বস্তু জগৎ। এখানে অলৌকিকতার কোনও ঠাঁই নাই।

কিন্তু পুঁজিবাদের  মূল পুঁজিই তো হলো অলৌকিকতা। প্রবীর ঘোষ সেই অলৌকিকতাকে চ্যালেঞ্জ করলেন একেবারে মাঠে ময়দানে নেমে। গুরু, গুরুবাবা, জ্যোতিষী, আত্মাবিশেষজ্ঞ, ভূতবিদ, পরাবিজ্ঞানবাদী সকলের সামনে ধেয়ে এলেন সুনামি হয়ে। এক ধাক্কায় ধুয়ে গেল এইসব অলৌকিকতাবাদের ধারকের,  বাহকেরা। 

 প্রমাদ গুণলো এই সব মিথ্যাশ্রয়বাদীরা। বিপন্ন হল তাদের অস্তিত্ব। তাই সকলে একযোগে আক্রমণ করতে থাকল তারা। তাদের তাসের ঘর রক্ষা করতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করল। নিয়োগ করল নানান এজেন্সি। আজও  সক্রিয় সেই সব এজেন্সি।  নইলে যে তাদের মিথ্যের দুনিয়া প্রকাশ হয়ে পড়বে। ভেঙে পড়বে তাদের অলৌকিকতার সাম্রাজ্য। 

 প্রবীর ঘোষ হলো সেই ব্যক্তির নাম, যে নাম যুক্তিবাদের সমার্থক অন্য নাম। সমাজে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল নবজাগরণের ঢেউ। যুক্তিবাদ-নদের ঢেউ। সেই নদীতেও বাঁধ দিতে লাগল স্বার্থান্বেষী এক চক্র। আজও তারা সক্রিয়। পি.জি যেদিন মারা গেলেন, গর্তের অন্ধকার থেকে হিলহিল করে বেরিয়ে আসতে লাগল,  কাদা ছুঁড়তে লাগল, সেইসব অন্ধকারের জীবগুলি। প্রবীর ঘোষ মারা গেছেন, কিন্তু আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল তাঁর ঘোষিত চ্যালেঞ্জ। এইসব অন্ধকারের জীবেরা তো পাঁক ঘাঁটা জীব, 

চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মৃত প্রবীরকেও মারতে পারে না।

 তাই প্রবীর ঘোষের সামনে অলৌকিকতার দাবিদারের সংখ্যা শুণ্য। 

 এতেই এইসব অলৌকিকতাবাদীদের লজ্জা পাওয়া উচিত। কিন্তু ঐ যে বলে না, লজ্জা ঘেন্না ভয়, তিন থাকতে নয়। এরাও মিথ্যার পশরা  সাজিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছে, রূপ পালটে, ছল পালটে, ঢঙ পালটে। 

 যতদিন এই যুদ্ধ চলবে, প্রবীর ঘোষ ততদিন বেঁচে থাকবেন যুক্তিবাদীদের আদর্শ হয়ে। ততদিন  তাঁর চ্যালেঞ্জ, তাঁর বইগুলি যুদ্ধের মারণাস্ত্র হয়ে তাদের রাত্রের নিদ্রায় ত্রাসের অস্ত্র হয়ে ভয় দেখিয়ে যাবে। ভীতের চিৎকার শোনা যাবে। আজ যেমন শোনা যাচ্ছে। 


যুক্তিবাদের পথ চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে। কারণ এ পথ  কাল্পনিক কোনও গোঁজামিল দিয়ে তৈরি নয়। সত্য ও সত্যার্থ দিয়ে তৈরি।

ধর্মকারার প্রাচীর -
মহম্মদ মহসীন
Dec. 3, 2024 | যুক্তিবাদ | views:926 | likes:13 | share: 0 | comments:0

 দক্ষিণ পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ মালাউই (Malawi)।  সে দেশের প্রধান ভাষা চেচুয়া (chichuwa)।  সে ভাষায় একটা কথা আছে।  "M' mera mpoyamba". ইংরাজি করলে হয় catch them young. 

অর্থাৎ বোধবুদ্ধি গজানোর আগেই পাকড়াও করো। সারাজীবন, সেই ধারণাতেই বাঁধা থাকবে। এমন বন্ধন যে সে বন্ধন খুলে দিলেও সে বুঝতেও পারবে না। কথাটি এত সত্য যে বিভিন্ন ধর্মীয় দর্শণের অনুসারী দল এটাই বাস্তবায়িত করে থাকে। ফলও ফলে। 

একমাত্র যুক্তিবাদ বলে, মানুষ বড় হোক, চিন্তা করতে শিখুক, তবেই তার মধ্যে যুক্তিবাদের আলো দাও। তার জীবনে কোন পথে চলবে, বড় হোক,  বড় হয়েই তা ঠিক করবে। তার মধ্যেকার অন্ধ বিশ্বাসের অন্ধত্ব দূর হলে তবেই মানবিক গুণের বিকাশ ঘটবে। 

 কিন্তু সমাজ  মানুষকে বড় হতে দেয় না। মানুষের বয়স বাড়ে, সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ে, নাম ডাক বাড়ে, কিন্তু সেই মানুষ কখনো বড় হয় না।

 সুনীল গাঙ্গুলী লিখেছেন, “এতগুলো শতাব্দী গড়িয়ে গেল, মানুষ তবু ছেলেমানুষ থেকে গেল

কিছুতেই বড় হতে চায় না

এখনো বুঝলো না যে ‘আকাশ’ শব্দটার মানে

চট্টগ্রাম কিংবা বাঁকুড়া জেলার আকাশ নয়

মানুষ শব্দটাতে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই

ঈশ্বর নামে কোনো বড়বাবু এই বিশ্বসংসার চালাচ্ছেন না

ধর্মগুলো সব রূপকথা

যারা সেই রূপকথায় বিভোর হয়ে থাকে

তারা প্রতিবেশীর উঠোনের ধুলোমাখা শিশুটির কান্না শুনতে পায় না।”


মনোবিদ বলেন, শিশুমনে যে ধারণা প্রোথিত করা হবে ছোটবেলাতেই, তা থেকে নট নড়ন-চড়নের মানসিকতা তার  ষোলোআনা। 

ঠিক এইকারণেই ধর্মের অন্ধবিশ্বাস প্রোথিত হয়ে যায় ছোট থেকেই। ভক্তি গ্রাস করে যুক্তিশীল মানসিকতাকে। 

  ধর্মের প্রতি অন্ধভক্তি মানুষের মধ্যেকার র‍্যাশানাল চিন্তনশীলতাকে গ'ড়ে উঠতে দেয় না। জন্মগতভাবে মানুষ যে যুক্তিশীল মানসিকতা পেয়ে থাকে, তাকে বাঁচতে দেয় না রাজনীতিক ও সামাজিক স্বার্থনীষ্ঠ মদতে পুষ্ট অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী জগৎ। মারতে মারতে, মেরেই ফেলে। 

 কিভাবে এই অন্ধবিশ্বাস একটি শিশুকে, তার পরিবার ও সমাজকে বিপথে চালিত করে তা উপলব্ধি করলে দুঃখ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।


 একটি উদাহরণ দিলে বক্তব্যটি হয়তো আর কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে। আমার বাস্তব জীবনে দেখা ঘটনা। মুসলিম পরিবারেই বিভিন্ন সামাজিক স্তরে, ছোট শিশুদের আরবী শিখতে চাপ দেওয়া হয়, নামাজ পড়া শিখিয়ে দেওয়া হয়। সবথেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপার রমজান মাসে এইসব ছোট ছোট শিশুদের শেখানো হয় সারাদিন নিরম্বু উপবাসের মাধ্যমে কৃচ্ছসাধন করেই ঈশ্বরের কৃপালাভ করা যায়। যার কাছে ক্রিকেট, ডাংগুলি, নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব, লেখাপড়া এইসব বিষয় হল জীবন্ত সেখানে কিম্ভুতকিমাকার ঈশ্বর ধরে এনে তাদের মনের মধ্যে গুঁজে দেওয়া হয়, সর্বক্ষণ তার 

অস্তিত্বহীনতাকে ঢাকতে নানান ফাঁদ ব্যবহার করে মেরে ফেলা হয় তার মাঝে প্রশ্ন করার মানুষটাকে। ছাঁচে ঢেলে তাকে বানিয়ে ফেলা হয় হিন্দু অথবা মুসলিম। যাতে মানুষ হতে না পারে তার চেষ্টা থাকে নিরন্তর।

 

 শিশু থেকে একটু বড় হওয়া কিশোরী-কিশোরদের কাছে কষ্টকর কাজগুলি সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই একটা এ্যাডভেঞ্চার। জীবনের প্রকৃত এ্যাডভেঞ্চার, জীবনের প্রকৃত কষ্টকর কাজগুলিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে তা অতিক্রম করার পরিবর্তে তাদের সামনে রাখা হয় সারাদিন না খেয়ে দিনাতিপাত করার মেকি চ্যালেঞ্জ। জীবনে একটি মেকি ও পলায়নপর জীবনশৈলী গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এভাবেই যুবসমাজের মধ্যে মুক্তিকামী চেতনা গড়ার পরিবর্তে ইংরাজদের মদতপুষ্ট এইধরণের মেকি চ্যালেঞ্জকে যুবসমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল ধর্মগুরুরা। এভাবে যুবসমাজ বাস্তব দায়িত্বের থেকেও এক অলৌকিক দায়কে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল। ক্ষতি করেছিল স্বাধীনতা আন্দোলনকে। জনৈক বিপ্লবীর এভাবেই মগজধোলাই হয়। বিপ্লব ছেড়ে ধ্যানট্যানে মনোযোগ দেন, আমরাও তার বিল্পবী জীবন নিয়ে যত না আগ্রহী, তার শতগুণ বেশি আগ্রহ নিয়ে লম্ফঝম্ফ করি তার এই ধর্মান্ধীয় 

জীবন নিয়ে। 


 আসলে আবার বলি, ধর্ম হলো পরিশ্রম না করে জীবিকার্জনের সহজতম উপায়। 

যেহেতু ধর্ম রাজনীতির এক মোক্ষম হাতিয়ার, যেহেতু ধর্মকে ব্যবহার করে সম্প্রদায়গত আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্সে সাফল্য পাওয়া যায়, যেহেতু ধর্মনেশায় আচ্ছন্ন জনগনকে তাদের নেশার বস্তুটি সরবরাহ করতে পারলেই রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়, তাই ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার সমস্যা হয় না। ধর্ম নেশাগ্রস্তদের ধর্মীয় আকাঙখা পূরণ করতে পারলেই অনেক দায় পূরণ না করলেও রাজনীতিগত কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না, তাই মানুষ ধর্মের অন্ধকারে বাস করুক, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই সেটি চায়। ধর্মনেশায় উৎসাহ যোগায়, ধর্মান্ধতা প্রসারে ইন্ধন যোগাতে চায়। ইংরাজ শাসনও চেয়েছিল, সেই বিপ্লবী আরো কিছু যুবককে বিপথে চালিত করে ধর্ম ধর্ম করুক, তাতে তাদের শাসন কায়েম রাখায় অনেক সাহায্য করা হবে। ইংরেজদের দেখা যায় অনেক "মহাপুরুষের" পাশে দাঁড়াতে। “মহাপুরুষ” গুলিকেও দেখা গেছে, ইংরেজদের পাশে দলবল নিয়ে সমর্থন দিতে। 


 আজ যা বলতে এসেছি, ধর্মের যাপন, অভ্যাস শিশুদের মধ্যে প্রোথিত করে। সেই শিশুদের মধ্যে জিজ্ঞাসার মানসিকতাকে ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়। কেন রাতদুপুর থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত মাইক্রোফোন বাজিয়ে নিজ ধর্মাচরণের কারণে অপরের জীবনকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছি, এ প্রশ্ন তাদের মনে আসার বীজটিকে মেরে মেরে মৃত করেই ছাড়ে, সুনাগরিক হওয়া তো দূরস্থান, কেন সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদকে জিইয়ে জিইয়ে মানুষের সমাজকে ইতরপ্রাণীর জীবন থেকেও নিকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে ধর্মের যাপনে,  সে প্রশ্ন তাদের মনে আসে না। ধর্ম কেন পুরুষতান্ত্রিকতায় পক্ষপাতিত্ব করে নির্লজ্জভাবে, এ প্রশ্ন আসেনা, কেন দিনের পর দিন ভোরের আজানে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হবে, কেন সংকীর্তনে অবিরাম মাইক বাজিয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হবে, কেন ধর্মের আশ্রয়ে থেকে মানুষের উপর অত্যাচার করা হবে, এসব প্রশ্ন তাদের মনে আসে না। এক্কেবারে বোধ বুদ্ধি সহমর্মিতার দরজা জানালা বন্ধ করে অচল থাকার নেশায় বদ্ধপরিকর এই সকল মৃতমনের রোবটেরা শুধু চিন্তা করতে শেখায় নিজের কথা, শুধুই নিজের কথা। এসেছি একা (কে, কোথা থেকে?),  যেতে হবে একা (কোথায়?) এসব পাতি কথাগুলি তাদের মনে গভীর জীবনদর্শণ। 

এমন নির্লজ্জ স্বার্থপরতার শিক্ষা দেয় সকল ধর্মদর্শণ। 

কেন নারী কন্ঠে আজান শুনি না, কেন নারীকে ধর্মগ্রন্থে আপনার অধিকার আদায়ের পথে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হতে হয়, সে বিষয়ে পিছনপানে ঘোরা সমাজের চাকাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আন্দোলনের কথা ধার্মিকেরা চিন্তাও করতে পারে না।

  শিশু থেকে কিশোরী/কিশোরদের ধার্মিক করে গড়ে তোলা হয় এভাবেই, যাতে তাদের বোধের দ্বার রুদ্ধ থাকে চিরকাল। বিজ্ঞানের সারতথ্যের সাথে ধর্মগ্রন্থের সংঘর্ষ থাকলে ধর্ম তাদের মিথ্যাকে জোর দবরদস্তি চাপিয়ে দিতে মরিয়া। এজন্য বিজ্ঞানীদের পোড়াতে, অত্যাচার করতে, হত্যা করতেও তাদের হাত কাঁপে না

 এরা আসলে এক বোধহীন রুদ্ধমনের প্রাণী। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে না, যেখানে ছয়মাস দিন, ছয়মাস রাত্রি, সেখানকার অধিবাসীরা কিভাবে সারাদিন নিরম্বু উপবাস  পালন করবে? "পৃথিবী ঘোরে" এই সামান্য তথ্যটিও যার অজানা সেই ধর্মগ্রন্থ প্রণেতা কিভাবে মহাবিশ্ব নিয়ে লেখার ধৃষ্টতা দেখান।  বিজ্ঞানের ভবিষ্যত নিয়ে যার সামান্যতম ধ্যান ধারণা নেই, তিনি কিভাবে শ্লোক-সত্য লেখেন যে গর্ভস্থ ভ্রুণের লিঙ্গ,  শিশুর জন্মের পূর্বে স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া  যেখানে গর্ভস্থ ভ্রুণের লিঙ্গ কোনো মানুষ জানতে পারবে না?

 এসব প্রশ্ন ধার্মিকদের বিব্রত করে না, অস্থির করে না, ধর্মের প্রশ্নাতিত আনুগত্যে সন্দেহ জাগাতে পারে না। 

  ধর্ম যুবতী/যুবকদের মনকে আলোড়িত করে প্রশ্ন জাগায় না, কেন রবীন্দ্রনাথের 'চতুরঙ্গের" জগমোহন বালবিধবা ননীবালার বিধবা-মাতৃত্বকে সমর্থন করেন, কেনইবা শচীশের সঙ্গে বিবাহে উদ্যোগী হন। তাঁর কথা, “দেখ্‌ বাবা, আমরা নাস্তিক, সেই গুমরেই আমাদিগকে একেবারে নিষ্কলঙ্ক নির্মল হইতে হইবে। আমারা কিছুকে মানিনা বলিয়াই আমাদের নিজেকে মানিবার জোর বেশি।” 

যুবতী/যুবকদের মনে নাস্তিকতার প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে পারে না। 

 আকাশের পাখিকে  বেড়ি পরিয়ে খাঁচার ভিতর রাখতে রাখতে যেমন তাকে খাঁচাতেই অভ্যস্ত করে ফেলা হয়, খাঁচার দরজা খুলে দিয়ে যা রে উড়ে যা রে পাখি বলে পীড়াপীড়ি করলেও খাঁচা থেকে  বেরিয়ে ওড়ার ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি তার আর থাকে না, তেমনই 

ধর্মকারার মধ্যে আবদ্ধ থাকতে থাকতে বদ্ধমনা ধার্মিকেরাও নিজেদের মুক্তিস্পৃহাকে কখন যেন হত্যাই করে ফেলেছে, তা তাদের চেতনাতেই আসে না। 

  ধর্মকারার প্রাচীরে  বজ্রহানার কথা তো তাদের মাথায় স্বপ্নেতেও আসে না। সেই প্রাচীরের দরজা খোলা থাকলেও প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা তারা ভাবতেও পারে না। 


তাদের  চেতনার দ্বার খোলার জন্য আমাদের নিরলস প্রয়াস তাই জারি থাকবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, নিরবধি কাল পর্যন্ত। দেশ থেকে দেশান্তরে।

যুক্তিবাদী নবধারার অভিবর্তন -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 27, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:819 | likes:0 | share: 0 | comments:0

অভিবর্তন অর্থাৎ উত্থান। যুক্তিবাদ, যুক্তিবাদভিত্তিক চেতনার উন্মেষ প্রকৃতির বিবর্তন নিয়ে কিছু পড়াশুনা করলে জানতে পারা যায়, বিভিন্ন যুগে তার পরিশীলন পরিসরের তাবৎ পরিবর্তন ঘটে গেছে, বিশেষত রেঁনেসাঁ পরবর্তী যুগে, সারা পৃথিবীজুড়ে যে শিল্পায়ণ ঘটে, তার ফলে মানবসমাজে এসে গেল নবধারার উত্থান। কয়েকটি ধাপে এই পর্যায়গুলির ক্রমান্বয়ী আগমন ঘটে। সেগুলি বলা যায়, the Age of Reason, the Scientific Revolution, the Age of Revolution, the Industrial Revolution, the Age of Imperialism ইত্যাদি। রাজনীতি-ধারার যে পরিবর্তন এল, তাতে আরো বেশি বেশি করে ধর্মকে হাতিয়ার করে গড়ে তোলার প্রয়োজন হতে থাকল। আর ধর্মকে যতই যুক্তিবাদের খোলস পরানোর চেষ্টা হতে থাকল, গোঁজামিলের পাহাড় জমা হতে থাকল ততই দ্রুততার সঙ্গে।  

 আশার কথা হল ধর্মের অন্ধতা মানুষের মনকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারে না। তাই ধর্মের গোঁজামিলগুলো একটু ভাবলেই আমাদের কাছে ধরা পড়ে।

  ধর্মের যত বাড়বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সমতালে ধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধমতও কিন্তু শক্তিশালী হয়ে উঠছে। 

  মানুষ যদি একটু প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ধর্মের দিকে তাকায়, তাহলে ধর্মের গোঁজামিলগুলি সহজেই ধরা যায়। যুগ যুগ ধরে ধর্মগুরুদের মিথ্যাচার সমাজে অসত্যকে সত্যের প্রতিষ্ঠা দেয়।

  ধর্মোপজীবীরা ধর্মকে আশ্রয় করে কেরিয়ার তৈরি করে। রাজনীতির লোকেরা এদের স্পনসর করেন। মানুষে মানুষে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ ধর্মের এক 'মহান-অবদান' সমাজে।

 ধর্ম হল, পরিবার, সমাজ ও দেশ হতে দেশান্তরে, ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে, ঈশ্বর, আত্মা, প্রেতাত্মা, পরমাত্মা জাতীয় অস্তিত্বহীন বিষয়কে বিশ্বাসনীয় করে তুলে সেই অন্ধবিশ্বাসের নেশায় প্রতিদিন যাপনের তন্ত্র গঠন করে, ধর্মান্ধকারে নিমজ্জিত মানুষকে ভক্তিরসে জারনের মাধ্যমে অন্ধকারতর পথের দিশায় বিভ্রান্ত করে মানুষের যুক্তিশীল চেতনাকে প্রতিনিয়ত প্রতিহত করার মাধ্যমে রাজনীতি ও ধর্মোপজীবিদের কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করার এক মোক্ষম হাতিয়ার।

 ধর্ম হলো পরিশ্রম না করে জীবিকার্জনের সহজতম উপায়। 

যেহেতু ধর্ম রাজনীতির এক মোক্ষম হাতিয়ার, ধর্মকে ব্যবহার করে সম্প্রদায়গত আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্সে সাফল্য পাওয়া যায়, যেহেতু ধর্ম নেশায় আচ্ছন্ন জনগনকে তাদের নেশার বস্তুটি সরবরাহ করতে পারলেই রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়, তাই ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার সমস্যা হয় না। ধর্ম নেশাগ্রস্তদের ধর্মীয় আকাঙ্খা পূরণ করতে পারলেই অনেক দায় পূরণ না করলেও রাজনীতিগত কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না, তাই মানুষ ধর্মের অন্ধকারে বাস করুক, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই সেটি চায়। ধর্মনেশায় উৎসাহ যোগায়, ধর্মান্ধতা প্রসারে ইন্ধন যোগাতে চায়।

  এবার সিদ্ধান্ত আপনার, বর্জ্যকে পূজ্য করবেন, না কি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সার্বিক বিকাশের পথে চলবেন।

অলৌকিক নয়, লৌকিক -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 26, 2024 | যুক্তিবাদ | views:298 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আমাদের চারিপার্শ্বের সব ঘটনাই লৌকিক, বাস্তবিক। অলৌকিক বলে কিছু হয় না, সবই লৌকিক। যৌক্তিক মননশীলতাতেই এটির স্বরূপ আমাদের মাঝে স্থাপিত হতে পারে।


   আজ পর্যন্ত একজনকেও পেলাম না, যিনি নিজেকে ভাবেন ধর্মান্ধ। 

প্রত্যেকে মনে করেন, অন্যে ধর্মান্ধ, অন্যে যুক্তিবাদের কিছু বোঝেন না, অন্যে স্বার্থপর। তিনি কিন্তু যুক্তির পরাকাষ্ঠা। যুক্তিবাদের ধারক বাহক। তিনি সংস্কারহীন, ধর্মান্ধতামুক্ত, সৎপথের অনুসরণকারী। 


  তিনি যে যুক্তিবাদী, তার প্রমাণ তিনি কুসংস্কার মানেন না। কুসংস্কার কাকে বলে? ঐ যে পরীক্ষার দিনে ডিম খেতে নেই। এর তিনি যুক্তিসম্মত কারণ আবিষ্কার করেছেন। 

 আবার আরেক ধরণের যুক্তিবাদী আছেন, তারা ডিম খেয়েও দেখেন, যে তাতে  না কি পরীক্ষায় ভাল ফল করেছেন। যুক্তিবাদী এসব বালখিল্য পরীক্ষা করতে যাবেন?

 একজন ভাবলেন যে সাপে কাটলে ওঝার মন্ত্র তন্ত্রে কোনো কাজ হয় না। সাপে কাটা রোগী তার হাতে মারা পড়ল। কাজেই ওঝার কাছে যাওয়াটা কুসংস্কার। 

 

ভাল কথা,  এবার  চিন্তা করুন। 

 কাউকে সাপে কাটলো, তাকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, কোনো কারণে, হতে পারে বিষহীন কামড় বা কামড়েও বিষ না ঢালা প্রভৃতি কারণে, বেঁচেও গেল। তাহলে কি ওঝাগিরি সায়েন্টিফিক হয়ে গেল? যুক্তিবাদে স্বীকৃতি পেয়ে গেল? সেইরকম, ডিমভক্ষণেও পরীক্ষালব্ধ ফল ভাল হলে ডিমভক্ষণও তো সায়েন্টিফিক হয়ে গেল, তাই না? এই যুক্তিতে ডিম খেয়ে পরীক্ষা  দিতে গিয়ে ফেল করলে, ডিম না খেয়ে  যাওয়ার প্র‍্যাক্টিসও তো তাহলে বিজ্ঞানসম্মত হয়ে যায়, তাই না?

 আসলে যুক্তিবাদের কতকগুলি উপাত্ত আছে। যেগুলির একদিক বিচার করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।  সত্যে উপনীত হতে গেলে তার বিপরীত প্রান্তেও দৃষ্টিনিক্ষেপিত করার প্রয়োজন হয়। বলা ভাল, তার চারিদিক দেখতে হয়।  

  র‍্যাশান্যালিজম যেমন মানুষপ্রাণীর ধর্ম, 

এ্যাণ্টির‍্যাশান্যালিজমও তেমনি মানুষপ্রাণীর মধ্যেই  দেখা যায়। এজন্যই মানুষের মাঝে ধর্মপ্রাণদের অনেকে যুক্তিবাদী বলে মনে করেন। ভূতে অবিশ্বাসীদের যেমন যুক্তিবাদী ভাবা হয়, ভগবানে বিশ্বাসীদেরও তেমনই যুক্তিবাদী বলে স্বচ্ছন্দে মেনে নেওয়া হয়। অন্ধবিশ্বাসের মুখোশ হলো এ্যান্টির‍্যাশান্যালিজম যা অনেক সময়েই যুক্তিবাদের ছদ্মবেশে ঘোরাঘুরি করে।

  যুগ যুগ ধরে ধর্মগুরুদের  মিথ্যাচার সমাজে অসত্যকে সত্যের প্রতিষ্ঠা দেয়।

 একটা উদাহরণ দিলে, বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারে। যেভাবেই হোক, একজন বিশেষ প্রতিষ্ঠা পেলেই, তার সমস্ত কাজের ভিত্তিতে যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করার লোকের অভাব হয় না। এমনকি তার কাজের সমর্থনের পিছনে অলৌকিক কিছু ঘটনার অবতারণা করা হলেও শিক্ষিত সমাজে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিবর্তে সমাদৃত হতে দেখা যায়, অথচ এই পৃথিবীর নিয়ম হলো অলৌকিক কিছু হয় না। এ জগতে অলৌকিকতার কোনো স্থান নেই। সমস্তই লৌকিক। একজন ধর্মগুরু প্রৌঢ় বয়সে বিয়ে করতে চান একটি বালিকাকে। এজন্য তিনি জানান এটি স্বয়ং ঈশ্বরের নির্দেশ। সমস্ত লোক তাকে সমর্থন করলেও, তিনি নিজে তো জানেন, কতবড় মিথ্যার আশ্রয় তিনি নিয়েছেন। তার অনুসরনকারীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁকে দেখে অথচ তিনি নিজে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করলে,  মানুষের সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করে এইরকম মিথ্যাচার করতে পারতেন না। গুরু নিরীশ্বরবাদী হলেও  শিষ্যরা কিন্তু ঈশ্বরে পুরোমাত্রায় বিশ্বাসী। 

 আসলে নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মাধ্যমে এই বিশ্বাসের যাপন ঘটে চলে অষ্টপ্রহর। এর শিকড় আষ্টেপৃষ্ঠে জমাট বাঁধে ব্যক্তিমনে, জীবনে, জীবনশৈলীতে। তার থেকে বেরোনোর কথা তার মননে আসতেই পারে না। তখন তার এই মেকি মূল্যায়ণের সমর্থন খোঁজে তার ধর্মাদর্শে, তার ধর্মগ্রন্থে, ঠিক যেখানে শুরু তার ধর্ম প্রণেতার মিথ্যাচার, বৃত্ত যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, বর্তমান উপস্থিত হয় ঠিক সেই বিন্দুতেই। এজন্য সমস্ত ধর্মের গ্রন্থেই মিথ্যাচার, অজ্ঞানতা,  অনিষ্ঠা, অনীতিগুলি নির্মিত হলেও ধরা পড়ে না ভক্তের ভক্তিভিত্তিতে বেড়ে ওঠা জীবনাদর্শে। কী শিক্ষিত, কী অশিক্ষিত, এই যুক্তি-অন্ধত্ব সকলের মধ্যেই প্রকট। এই অন্ধকার ভেদ করে আলো আসতে দেরী আছে। অনেক দেরী আছে।

 কাজেই এই সময়কে ধরাছোঁয়ার মধ্যে আনতে হলে, আমাদের জোর দিতে হবে মানুষের মন থেকে অলৌকিকতাবাদকে দূর করার কাজে। অলৌকিক যেখানেই খবর পাওয়া যাবে সেখানেই ছুটতে হবে।

 

সম্প্রতি আমি খবর পেলাম হুগলী জেলার প্রান্তে জিরাট কবুরা গ্রামে একটি ঝিল আছে, যেখানে না কি সন্ধ্যার পর পাম্পসেট চালানো যায় না। এমনকি দিনের বেলা চালিয়ে দিলেও সন্ধ্যা নামতে না নামতেই পাম্পসেটটি বন্ধ হয়ে যায় আপনা আপনিই। তো আমি আর কী করতে পারি, তাকে বললাম, আপনি নিজে দেখেছেন? উনি জানালেন, না উনি দেখেননি। এমনকি প্রত্যক্ষদ্রষ্টা কারুর নামও জানাতে পারলেন না। শেষে উনি নিজেই উপলব্ধি করলেন, এতদিন ঠিকমত খবর না নিয়ে উড়ো কথায় বিশ্বাস করে ভ্রান্ত ধারণায় ছিলেন। পাম্পসেট বন্ধ কেন হবে তার যুক্তিসঙ্গত কারণ আন্দাজ করতে পারলেন না। অলৌকিক উপায়ে হয়তো হতে পারে বলেই তার ধারণা। এবার অনুরোধ করলাম, তাহলে যারা দাবী করেন তাদের কাউকে আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে বলুন। শত প্রচেষ্টাতেও একজনকেও পাওয়া গেল না, যিনি এই চ্যালেঞ্জ নিতে চান। অর্থাৎ এতদিন শোনা কথা শুনেই এসব অলৌকিকে বিশ্বাস করছিলেন তারা, কিন্তু চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথা উঠতেই কেউ রাজী হলেন না,  কারণ তারা আসলে কেউই দেখেননি, শুধুমাত্র শুনেই বিশ্বাস করেছেন, যাচাই করে দেখেননি। বাস্তব পরীক্ষা নিরীক্ষা কথা উঠতেই স্বীকারই করে নিলেন, অমন আবার হয় না কি? হয়তো  কোনো কারণে কারুর পাম্পসেট কোনো একবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার ভয়, তার অন্ধবিশ্বাস থেকেই গুজব রটেছিল, না যাচাই করেই এতদিন তারাও সেকথাই বলে চলছিলেন, আজ বুঝলেন এমন ঘটনার দাবী করাটা ঠিক নয়। এর কোনো বাস্তব ভিত্তিই নেই। 

  আমাদের যুক্তিবাদী আন্দোলনের প্রসারের কার্যধারায় তাই অলৌকিকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলাটাই প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেখানেই অলৌকিক কিছুর কথা জানা যাবে, বুঝিয়ে দিতে হবে এগুলো গুজবমাত্র, সত্য ভিত্তি নেই। চ্যালেঞ্জ নিতে বললেই তাদের উপলব্ধিতে আত্মীকৃত হবে যে আসলে অলৌকিক বলে কিছু হয় না। অলৌকিক ছিল না, অলৌকিক থাকবেও না। ধর্মগুরুদের অলৌকিক কাজগুলি আসলে কৌশলের আশ্রয়ে বাস্তব কোনো উপায়েই সম্পাদন করা। অর্থাৎ প্রতিটি অলৌকিক কাজের পিছনেই আছে লৌকিক প্রকৌশল, বাস্তব কারণ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় তার স্বরূপ অনুধাবন করাটাই একমাত্র সঠিক পথ।


  যুক্তিবাদী আন্দোলনে তাই অলৌকিকতাবাদকে মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা, ঘটনাগুলি যেখানে যেখানে করে দেখানো সম্ভব, সেখানে সেখানে লৌকিক উপায়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াই পথ।

 যুক্তিবাদের তাই নীতি: অলৌকিক নয়, লৌকিক।

ঈশ্বরের স্বর্গবাস -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 25, 2024 | যুক্তিবাদ | views:622 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বাড়ির কর্তা কী কী দায়িত্ব পালন করে? বাড়ির কর্তা কতটা ভাল খায়৷ কতটা মাখে। কতটা ভোগ করে। সাধারনত আমরা দেখি, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই তার দায়। তিনি থাকেন বটগাছের মতো। সংসারের সকলেই তার উপর নিশ্চিন্ত। তারা জানে, বাবা-মা নিজেরা না খেয়েও সকলের মুখে খাবার তুলে দেয়।

 আচ্ছা বাবা-মা কি এর বদলে থ্যাঙ্কস চায়?  'আমায় পুজো করো পুজো করো, আমায় ভয় করো' বলে? নিজে থাকে স্বর্গে, তার হুকুম যে মানে, সেই ছেলেকে সঙ্গে নেয় সেই সুখের স্বর্গে।  দস্যি ছেলেটিকে ছুঁড়ে দেয় নরকের যন্ত্রণা ভোগ করার জন্যে? আসল বাবা তো নিজের জন্য বেছে নেয় যন্ত্রণার জীবন, সন্তানকে দিতে চায় নিরাপদ, নিশ্চিন্ত স্বাচ্ছন্দময় জীবন। 

  বাবামায়ের সাথে ঈশ্বরের একটু তুলনা করে দেখুন, কার ত্যাগ বেশি।

   হিন্দি সিনেমায় দেখি, ভিলেন তার গুণ্ডাবাহিনী নিয়ে বাজারে তোলা তোলে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বদা। মানুষের মনে ভয় জিইয়ে রাখে।  ভগবানের কাণ্ডকারখানাও সেই সিনেমার ভিলেনের মতো। মানুষের  মনে ভয় সৃষ্টি করাই তার সাম্রাজ্য বিস্তারের মূল কথা। লোকেও বলে থাকে,  ভগবানকে ভয় করো। শ্রদ্ধা করো। ভক্তি করো। অর্থাৎ তারা জানে ভগবান ভয়ানক কিছু "একটা বা না-একটা"  বিষয় বা বস্তু। তাকে ভয় করতে হয়, ভক্তি করতে হয়, ঠিক হিন্দি সিনেমার সেই ভিলেন যেমন চায়। ঈশ্বর পুজোর কাঙাল। ভক্তির কাঙাল,  শ্রদ্ধার কাঙাল। 

  মানুষের যৌক্তিক চেতনার স্তর কেমন দেখুন। 

 এদিকে যতই জুজুর ভয় দেখানো হোক, শিশুর মন থেকে জুজুর ভয় একদিন কেটে যায়, কারণ বোধ আসে, জুজু-টুজু বলে কিছু নেই। জুজু-বিশ্বাস কেটে যায়।

 ভূতের ভয়ও অনেকের কেটে যায়, দুই একজনের কাটে না। ভগবানে বিশ্বাসও কাটে না।

 স্বনামধন্য এক সাহিত্যিক অকপটে বলেন, তিনি ভূতে বিশ্বাস করেন। অনেকে শুনে হাসেন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলেন। আমি বলি কি, উনি ওঁর যুক্তিতে ঠিক আছেন। ভগবান যদি থাকে, তাহলে ভূতও আছে, 

আত্মা যদি থাকে, প্রেতাত্মাও আছে। কাজেই যিনি ভগবানে বিশ্বাস করেন, তাঁর ভূতে বিশ্বাস থাকাটাও খুবই জরুরি। ভগবান আছে, কিন্তু ভূত নেই, এই দ্বিচারিতা অন্তত আমাদের সেই স্বনামধন্য সাহিত্যিকের নেই।

  আসলে দৈনন্দিন জীবনে, বাস্তবের ঘাত প্রতিঘাতে মানুষের যৌক্তিক চেতনা বলে ভূত-টুত কিছু নেই, কিন্তু   

 ভগবান-সংস্কারের অক্টোপাশ সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। ভগবানভীতি কেটে গেলেও পাছে লোকে কিছু বলের সংকীর্ণতা ছেড়ে বেরোনো যায় না। দেখবেন মানুষ মুখে বলে ভগবানকে ভয় করে, ভক্তি করে, তবু যত অন্যায় দুর্নীতি করে এই ঈশ্বরমানা লোকেই।  

 একটি রূপক। ভগবান সর্বত্র বিরাজমান। দোকানে দেখার কোনো লোক নেই, ভগবান সব দেখছে! আরও  লিখে দেওয়া হয়েছে, সঠিক মাল নিন। সঠিক দাম দিন। দোকানের প্রতিটি জিনিসের প্রতি তাঁর লক্ষ। খরিদ্দারসকল বেশ ভদ্রলোক, ধর্মপ্রাণ, অথচ দেখা গেল সব মাল শেষ, টাকার কাউণ্টারে টাকা কেউ দেয় নি।এমনটি হলে, বলাই যায়, ব্যবসা ডকে উঠতে তার দেরী নাই।

 কিন্তু যদি লেখা থাকে, আপনার গতিবিধির প্রত্যেকটি মুহুর্ত সিসিটিভিতে রেকর্ড হচ্ছে, দেখবেন মানুষ কত সৎ। ঠিক ঠিক জিনিস নিচ্ছেন, টাকাও দিচ্ছেন। বাস্তব জীবনে ভগবানভীতি না থাকলেও, সিসিটিভিভীতি আছেই। কারণ, এটি তাদের বিশ্বাসের ফলে নির্মিত সত্য নয়, বাস্তব উপলব্ধির মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা। 

ধর্মান্ধ তথা ধার্মিকে বিশ্বাস করে তার সব কিছুর নিয়ন্তা হল তার ঈশ্বর। জন্ম মৃত্যু, বিবাহ সব কিছু তার ঈশ্বর ঠিক করেই রেখেছে, তার এতটুকু নড়চড় করার ক্ষমতা কারুর নেই।  অথচ, এই ঈশ্বরের উপর নির্ভরতার নমুনাও দেখবার মতো। নিজের দুর্ভাগ্যের কথা,  বিপদ তথা ফাঁড়ার কথাও না কি গণনা করে জানা যায়। তা জানা যাক, গণনার ক্ষমতায় নির্ভুল এসব জেনেটেনে এবার যেটি করে তা কিন্তু তাদের বিশ্বাসেরই পরিপন্থি। জ্যোতিষী তাদের ঈশ্বরের লিখনকে পাল্টে দিতে পারে। ছোট্ট একটা আঙটি ভগবানের লেখা ভাগ্যকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও তারা জ্যোতিষীকে, জ্যোতিষবিদ্যাকে, রত্নপাথরকে ঈশ্বরের ক্ষমতার চেয়েও শক্তিমান বলে বিশ্বাস করে। দেখুন,  কীরকম তাদের যৌক্তিকতা। একবার বিশ্বাস করে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার ভাগ্যে বিপদ  লিখেছে, দুঃখ লিখেছে। আবার জ্যোতিষী তার থেকেও শক্তিমান।  আসলে এরা হল সুবিধাবাদী। লোভী। ভীত। স্বর্গের লোভে ঈশ্বর ঈশ্বর করে। মানুষের সাথে অন্যায় করে ক্ষমা চায় ঈশ্বরের কাছে। নরকের ভয়ে উপাসনা করে ঈশ্বরের। আবার কেউ গণনা-ফণনা করে তাকে ফাঁড়ার ভয় দেখালে শরণাপন্ন হয় তারই। সৌভাগ্যের লোভ দেখালে শরণাপন্ন হয় জ্যোতিষীরই। আসলে ধার্মিকের জীবনশৈলী গড়ে ওঠে এইরকম স্বার্থান্বেষিতায়। এরা তাই ধর্ম ছাড়া নৈতিকতার কথা ভাবতেই পারে না, ভাল কাজের জন্য ঈশ্বরের গিফটের বাইরেও কিছু চিন্তা করতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে এদের শিক্ষা নেই। শিক্ষার পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে ধর্মীয় জীবনশৈলী।

যুক্তিবাদীর খোঁজে -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 24, 2024 | সচেতনতা | views:293 | likes:2 | share: 0 | comments:0

বয়স তাঁর ৭৫,  কবিতার আসরে একটি কবিতা শোনালেন। মুক্তমনের কবিতা।  বক্তব্য, পৃথিবীতে অনেক অনেক দেশ আছে, যেখানে লক্ষ্মীপুজো করা হয় না কিন্তু ব্যবসায়ে তারাই অনেক এগিয়ে অনেকানেক দেশ আছে যে দেশের অনেকে সরস্বতীর নামই শোনেনি, কিন্তু তারাই শিক্ষায় জ্ঞানে বুদ্ধিতে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে  পথ দেখাচ্ছেন সারা বিশ্বকে। পুজোর নীটফল আসলে শুন্য। প্রার্থনার ভরসায় না থেকে, সেই সময়টাতে কায়িক বা মানসিক উৎপাদনাত্মক কাজ করার সুপরামর্শ বিষয়ে কবিতা। বৌদ্ধিক বিকাশে পুজো-আচ্চার সার-শুন্যতাই তাঁর কবিতার উপজীব্য-কেন্দ্র। পাঠশেষে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বেশ একটা অন্য রকম চিন্তা ভাবনা। তাই নয় কি?

  বুঝলাম, জীবনের ৭৪-টি শরৎ-আঁধার পার করার পর তাঁর মাঝে এই সু-বোধ এসেছে। মুক্তচিন্তনের জানালা খুলে মুক্তির বাতাসের বার্তায় কান রাখার সন্ধিক্ষণ এসেছে তাঁর জীবনে। তিনি নতুনের পেয়েছেন সন্ধান, সত্যের আলোয় দিশা পেয়েছেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। এগুলি খুবই ভাল কথা, আশার কথা। এই আশার কথা নিয়েই আজ দুটো কথা লিখি। মুক্ত চিন্তনের পরিসর করে দেওয়া আমাদের দায়। তাঁর কাছে যাওয়ার কথা ছিল আমার, দেবরাজের আর অনির্বাণের। উনিই একদিন চলে এলেন আমার বাড়িতে। অনেক কথা হলো। ভাল লেগে গেল ৭৫ বছরের এই যুবকটিকে। তাঁর মাঝে যুক্তিবাদের এই উন্মেষকে প্রত্যক্ষ করেই এবারের চেতনায় লেখার বিষয় পেয়ে গেলাম। বুঝলাম, দ্বীপে শুধু আমরা কয়েকজনই নেই, আমাদের সমমনস্কের প্রসারতার মহাবিশ্বে অনেকেই আমাদের আজো অজানা, আজো অজ্ঞাত। আজ তাই আমাদের আশার কথা নিয়েই এক কলম লেখার প্রয়াস। 


দ্বিতীয় জনকে যেমন দেখেছি:

  ইনি একজন রাজমিস্ত্রী। কাজ করছিলেন আমাদের বাড়িতে। লেখাপড়া ঐ ক্লাস নাইন কি টেন পর্যন্ত। কিন্তু তার সম্বন্ধে একটা কথার উল্লেখ না করলেই নয়। নিয়মিত লাইব্রেরী যান। রাত্রে বই পড়েন; শরৎ থেকে শরদিন্দু সব। আগাথা ক্রিস্টি, হ্যাডলি চেজ, ডিকেন্স, রবীন্দ্রনাথও তার পছন্দের লেখিকা-লেখক। জীবনানন্দও পড়ে ভাল লাগে। জিজ্ঞেস করলাম, প্রবীর ঘোষ বা ভবানিপ্রসাদ সাহুর বই পড়েছেন? বললেন, এই দুইজনই তাঁর অত্যন্ত পছন্দের লেখক। হাল আমলের তসলিমাও তাঁর আগ্রহের  ভিতরেই। একবার আমাদের ধনিয়াখালী সুরভি পাঠাগারের সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বয়স ঐ রকমই অর্থাৎ মধ্য সত্তর। তিনি ব্রাহ্মণ, কায়স্থ্য, ডোম, হাড়ি, শুঁড়ি এসব জাতপাত মানেন না। বেদ পুরাণ হ'ল ব্রাহ্মণদের বানানো গ্রন্থ। ধর্মের কঙ্কাল তাঁর অন্তর্দৃষ্টিতে বেশ ধরা পড়ে। নিরীশ্বরবাদী না হলেও, ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র ও মোল্লাতন্ত্রের কাঠামোটির অনেকটাই চিনে নিয়েছেন। 


  চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমজীবি। গান বাজছিল, "শত জনমের, কত সাধনায়, পেয়েছি মানব প্রাণ।" শুনে একজন অকপটে দ্বিধাহীন উচ্চৈস্বরে বলেন, গানটাতে ভুল বলছে, একেবারেই ভুল বলছে। জীবন একটাই। জন্ম একটাই। আগের জন্ম, পরের জন্ম, ওসব একেবারেই ধাপ্পাবাজি।

 আমি সেখানেই ছিলাম। বেশ অবাক হয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিভাবে বুঝলেন জন্মান্তর নেই? উনি উত্তর দিয়েছিলেন, আপনি দাবী করছেন জন্মান্তর বলে কিছু আছে? তাহলে আপনিই আপনার কথাটার প্রমাণ দিন। সত্যি অবাক হয়েছিলাম তাঁর এই যুক্তিশীল মানসিকতায়। 


   এক খ্যাতনামা জ্যোতিষীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললেন, দেখো, আগে তো নিজের জীবিকা। জ্যোতিষ প্র‍্যাক্টিস করে উপার্জন আমাদের দেশে সম্মানের পেশা। তবে তুমি যেটি বলতে চাইছ, তাতে আমিও পূর্ণ সহমত। আমি তো বিজ্ঞান নিয়ে কিছুটা পড়েছি। তাতেই বুঝলাম, জ্যোতিষে বিজ্ঞানের কোনোকিছুই নেই। লোককে বিজ্ঞানের নামে ধাপ্পা না দিলে কিছু শিক্ষিত লোককে আমাদের আঙিনায় আনা যায় না।


   এক ওঝা।  আঁকিবুঁকি এঁকে, গুনে,  মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুঁক, তেলপড়া, জলপড়া দিয়ে ভূত তাড়ান। বাড়ির দোষ কাটান। একান্তে স্বীকার করেছিলেন, ভূত, প্রেত, বলে কিছুই নেই। তাঁর অভিজ্ঞতায় এগুলো খেটে খাওয়া, কোথাও এতটুকু আলো-না-পাওয়া সমাজের অন্ধবিশ্বাস। সেই অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করেই আমাদের এই উপার্জন। মন সায় দেয় না। কিন্তু এ কাজে নাম হয়ে গেছে। পুরাতন পেশা। ছাড়ার কথাই চিন্তা করি না। কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং আমার ছেলে যখন লেখাপড়া শিখে বেকার জীবন কাটাচ্ছিল। তাকে চাকুরির ব্যবস্থা ধ্বংস করে, কোটি টাকার পাহাড় জমাচ্ছিল নেতা-মন্ত্রীরা, দুটো টাকার জন্য হতাশায় ভুগছিল, সুইসাইড করতে যাচ্ছিল। তখন  সেই অবস্থায় তাকে এই পথে আসার জন্য উৎসাহিত করি। এখন সে মাসে মাসে সম্মানজনক আয় করে থাকে। আর দেখবে, পয়সা না থাকলে তার কোনো জায়গাও নেই এই পৃথিবীতে।

  

সাথী, আজ আমি এইসবের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় বুঝলাম। 

এক, যুক্তিবাদ সকলের মধ্যেই আছে, সামাজিক আচার সেই যুক্তিমনস্কতাকে চাপা দিয়ে রেখেছে। কখনো আপন সত্তায় তা কোথাও কোথাও প্রস্ফুটিত হয়েও চলেছে। তবে সমর্থনের অভাবে, অভিঘাতের প্রভাবে, সম্পূর্ণভাবে তার প্রস্ফুটন ঘটতে পারছে না। উপরের যাঁদের কাছে আমি সরাসরি জানতে চেয়েছি, ঈশ্বর আছে কি না, তার উত্তর পেয়েছি, "কেউ একটা, কিছু একটা আছে।"

এবং

দুই, পেশার কারণে অবৈজ্ঞানিক বুঝলেও সেই পেশাকে গ্রহন করে জীবিকানির্বাহ করতে হচ্ছে। অনেক হোমিও ডাক্তার আছেন, যিনি নিজের চিকিৎসা করান মর্ডার্ণ ট্রীটমেন্ট ব্যবস্থায়। অবৈজ্ঞানিক বুঝলেও সেই পেশা নিতে বাধ্য হন। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামো অনেককে বাধ্য করে অবৈজ্ঞানিক জীবিকা বেছে নিতে। আমার দেখা এই জ্যোতিষিটি একান্তে স্বীকার করেন, এটা একটা ব্যাবসায়। জাতকের জীবনশৈলী দেখেই ভূত-ভবিষ্যত বলতে হয়। মামলা-মোকদ্দমা, প্রেম, সন্দেহ, বেকারত্ব, প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা, সন্তানের লেখাপড়াজনিত হতাশার সমাধানের আশায় ছুটে আসেন তাঁরা। তাঁদের এই হতাশা, দুর্বলতাই জ্যোতিষীর মূলধন।

   মানুষ তো আসলে এক র‍্যাশানাল এ্যানিমাল, তার মাঝে যেমন এ্যানিম্যালিটি আছে, তেমনই তার মাঝে র‍্যাশানালিটিও আছে। কিন্তু ঐ যে স্বার্থান্বেষী সমাজে ধর্মধ্বজীদের বানানো এক জগদ্দল পাথর মানুষের এই যুক্তিবাদী মননকে চাপা দিয়ে  দমিয়ে রেখে এসেছে, আসছে।  তবু শাশ্বত প্রকৃতিকে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা কৃত্রিমের থাকতে পারেনা৷ তাই নিকষ আঁধারের দুর্ভেদ স্থুল-বেধ প্রাচীরকেও ভেদ করতে পারে যুক্তিবাদের আলো। তার প্রকাশই আমরা পাই জীবনের আবশ্যিক ডাইমেনশন বা মাত্রাগুলিতে। 

  স্বার্থান্বেষীদের ভারী ভয়, যুক্তিবাদের মশাল যাঁরা বহন করে চলেছেন, তাঁদেরকে ভীষণ ভয়। তাই তারা মুক্তমনাদের খুন করে কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা জারি রেখে চলেছে। পারছে কি?

অচলায়তন -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 23, 2024 | সমাজ | views:812 | likes:0 | share: 0 | comments:0

সম্পর্কে না হলেও মেলামেশায় খুব কাছের আত্মীয়। আমার অবশ্য তার বাড়ি যাওয়া হয় না বহুদিন। তবে ওরা মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়ি  আসার ফুরসত পায়। আমার অনেক উপকারও করে দেয়।

 আসতে তাদের বেশ দেরি হলো। দেরি হওয়ার কারন হিসাবে পুজোর ভীড় বলতেই সে শোনালো এক কাহিনী। আমাদের জানা কাহিনী, কিন্তু সে বললে তার মনের মাধুরী মিলিয়ে মিশিয়ে পল্লবে পল্লবে জড়িয়ে, আপন রঙ ছিটিয়ে, ছড়িয়ে।

  দুর্গা কাহিনী। দুর্গা হল এক বারাঙ্গনা। আর্যরা ভারতবর্ষ দখল করতে এসে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে এদেশের আদি বাসিন্দাদের সম্মুখীন হলো। তাদের সাথে যুদ্ধে এঁটে উঠতে পারলো না।  কিন্তু এদের চরিত্র সম্বন্ধে কিছু ব্যাপার স্যাপার জেনে গেল। এরা কোনো নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করে না। কাজেই তারা দুর্গাকে যুদ্ধে এগিয়ে দিয়ে নানান অস্ত্রের যোগান দিয়ে গেল। যারা সুরা পান করে তারা হলো সুর। আর যারা সুরা পান করেনা তারা হলো অসুর।

 মহিষী মানে রাণী, এ আমরা অনেকেই জানি, যেমন রাজমহিষী।

মহিষ মানে রাজা। অসুরদের রাজা হলো মহিষাসুর।

  তো সেই মহিষাসুরকে যখন মারতে এলো দুর্গা। রাজা তার সাথে যুদ্ধই করলো না, বীরের মৃত্যু বরণ করলো। 

 এই লজ্জার বিজয়কে কাপুরুষ জয়ীরা আজও এমন একটা প্রতিমা বানিয়ে উল্লাস করে। 

  এই প্রতিমার মূল কথা হলো যুদ্ধ জয়। 

 

তার কাহিনী শুনলাম। ভাবলাম, এই ব্যক্তিটি প্রতিদিন নামাজ পড়তে পারে, রমজানে সারামাস উপবাস করতে পারে, কিন্তু এর মাঝেও আছে কিছু যুক্তিশীল ধ্যানধারণা। কাজেই এর কাছে মুখ খোলা যেতে পারে। 

 আসলে বুঝিনি, ধার্মিক মানেই ধর্মান্ধ। সে বুঝবে যুক্তি?

  তাকে বললাম, দেখো ধর্ম ব্যাপারটাই এমন, ধার্মিকেরা তোমার মতো এতটা গভীর-গভীর বিষয়ের খোঁজই রাখে না। 

 এই আমাদের হজরত মোহাম্মদের কথাই ধরো না। একদিন ভোরবেলা বলে দিলেন গাধার চেয়ে একটু বড়, খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট প্রাণী বোরাকে চড়ে আকাশে উড়ে আল আকসা মসজিদে যান, মহাকাশ ভ্রমণ করেন, আকাশের ১নং গেট, ২নং গেট এইসব খুলে আল্লাহের সাথে দেখা করেন।

আগ্রহী পাঠকের জন্য,  মেরাজের গাল গল্পটি একটু বিশদে জানার জন্য  নিচে লিংক দেওয়া হল:-

রেফারেন্স : link

আবার  দেখো উইকিপিডিয়া বলছে, এক হাদিস মতে

ঐ রাতে তিনি উম্মে হানীর ঘরে ছিলেন, আবার অন্য হাদিস মতে তিনি কাবা মসজিদে ঘুমাচ্ছিলেন।

 এখন দেখো দুই রকম কথা হচ্ছে, কাজেই এখানে দুটোই সত্য হতে পারে না, এর একটি তো অবশ্যই মিথ্যা। আর বোরাকের কথা তো মিথ্যাই। কারন প্রাণীবিজ্ঞানে এমন কোনো প্রাণীর কথা নেই যেটি মহাকাশে উড়তে পারে। পাখী ওড়ে বাতাসে। মহাকাশে সম্ভব নয়। এটা তো মোহাম্মদ স্পষ্টত মিথ্যাচার করেছেন।

কথা তখনও শেষ হয়নি। আমার সেই আত্মীয় তেড়ে এলো আমার দিকে, বললে, আর একটা কথা বলবেন না। তাহলে আমি কিন্তু কোনো রেয়াত করবো না।

আমার নবীজীর সম্বন্ধে যে কু-ইঙ্গিত করবে, মিথ্যাচারী বলবে তার ব্যবস্থা  করতে আমার এতটুকু আফসোস হবে না।

আমি প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম, পরে  উপলব্ধি করতে পারলাম, এটিই স্বাভাবিক।

এরা প্রকৃতই অন্ধভক্ত।   যুক্তি বোঝে না। অন্য ধর্মের অলৌকিকতায় সমালোচনার সাইক্লোন বইয়ে দেয়, নিজ ধর্মের কথা এলেই অন্ধত্বের কুৎসিত নখ দাঁত বেরিয়ে আসে। 


  তবু শান্ত স্বরেই বললাম, সে নাহয় তুমি মারধোর করবে, কিন্তু কথাটা হলো,  হাতের কাছেই তো আছে, উইকিপিডিয়া,  দেখে নিতে পারো।   সে এসব দেখে ইমান অর্থাৎ মোহাম্মদের উপর বিশ্বাস নষ্ট করতে চায় না। আমাদের যাদের ইমান নষ্টের আশঙ্কা নেই, আমরা দেখে নিতে পারি তো। (লিঙ্ক: link….)  

 

 আমার আত্মীয় অবশ্য এসব দেখতেই চাইল না। তার বক্তব্য কাফেররা এসব লিখেছে। তারা শয়তানের অনুসারী। যারা মোহাম্মদের কথা বিশ্বাস করতো না, তাদের কাফের অর্থাৎ অবিশ্বাসী বলা হত। মোহাম্মদের এক কাকা আবু লাহাবও তার কথা বিশ্বাস করত না। আমার আত্মীয়টি বলে, এসব মিথ্যা হলে কোটি-কোটি লোক চুপ থাকতো? বললাম, মোহাম্মদকে উম্মেহানি এ কাহিনী বলতে নিষেধ করেছিল। আর কাফেররা তো শুনেই তৎক্ষণাৎ মিথ্যা বলেছিল। এমনকি মোহাম্মদের স্ত্রী আয়েশাও  মোহাম্মদ সশরীরে মহাকাশে যাওয়ার ঘটনাকে সত্য বলে মেনে নেন নি। উৎস: উইকি।

 “সারা পৃথিবী যখন সত্য বলে মেনে নেয়, সেখানে কয়েকজন কাফের মিথ্যা বললে কী যায় আসে?”

তাকে বোঝালাম, সত্য বলার জন্য লোকসংখ্যা নির্ভর করে না। হাজার লক্ষ কোটি লোকে সত্য সত্য বলে চিৎকার করলেও মিথ্যাটা সত্য হয়ে যায় না। সত্যটা হাজার লোকে বললেও সত্য, একজন বললেও সত্য।

  আর এ জগতে এক ধর্মের লোকের অন্য ধর্মে বিশ্বাস নেই। কাজেই কোরাণে তথা আল্লাহে বা মোহাম্মদে বিশ্বাসীর সংখ্যার চেয়ে অবিশ্বাসীর সংখ্যাই বেশী। সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই এটি বলা যায়। কাজেই এই বিশ্বে অবিশ্বাসীর সংখ্যাই বেশি, যদিও সংখ্যার উপর সত্য নির্ভর করে না। 

আরেকটি ঘটনার কথা বলি। 

 আমার এক দাদা আছেন। তিনি একটু বেশি রকমেরই ঠাকুরভক্ত। পেশায় তিনি ডাক্তার। এম.বি.বি.এস। 

 আমার সেই আত্মীয়ের গল্পটি, অর্থাৎ দুর্গার কাহিনী তার গ্রুপে পোষ্ট করলাম। আমার লেখাটি বেশ সাবধানতা নিয়েই লেখা। তাতে আমার নিজের কোনো কথা ছিল না। ছিল আনন্দবাজারে প্রকাশিত দাশাই পরব নিয়ে লেখা। এই পোষ্টটি করার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রুপ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া  হয়। এটা তারা সহ্য করতে পারলেন না। বাজারে দেখা হলে বেশ উষ্মা সহ তক্কো (তর্ক বা বিতর্ক নয়)  করতে লাগলেন। শেষে আমার নামে রটালেন, আমি না কি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উস্কানি দিচ্ছি। 

 এই যে উগ্রতা, তার ভিত্তি হল অন্ধ ভক্তি, অন্ধবিশ্বাস। এখানে লেখাপড়ার কোনো প্রভাবই নেই। 

ধার্মিক মাত্রেই ধর্মে অন্ধ। সামজে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়।

  এক ধর্মের লোকের বুদ্ধিতে অন্য ধর্মের অবাস্তবতা,  অলৌকিকতা খুব সহজেই ধরা দেয়। ভক্তিতে অন্ধ হয়ে যান নিজ ধর্মের বিষয় এলেই। তখন একবার বাস্তবে আসেন, আবার পরক্ষণেই ভাব জগতে চলে যান।  নিজের অন্ধবিশ্বাস পোক্ত করার জন্য যেসব যুক্তির অবতারণা করেন, তা আসলে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার জন্যই, নিজেরা যে একেবারেই অন্ধ সেটাই জাহির করার জন্য।

  

    যাই হোক, এখানে এই সব কথা অবতারণার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো, এই সব ধার্মিক তথা ধর্মান্ধদের মধ্যে যুক্তিশীল মানসিকতা আনার কাজটা খুব-খুব কঠিন। এই দুরূহ কাজ তবু করে যেতে হবে। অন্ধকার কেটে একদিন আলো ফুটবেই। এ আশা, এ প্রত্যয় নিয়েই তো চলেছি আমরা।

অন্ধকারের উপাসনা -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 21, 2024 | যুক্তিবাদ | views:824 | likes:0 | share: 0 | comments:0

দুই বন্ধুই নামকরা  চিকিৎসক, অর্থাৎ সমাজের দৃষ্টিতে বেশ লেখাপড়া করা শিক্ষিত লোক।

   তাঁদের একজনের সমস্যা, তিনি কিছুতেই সিগারেট ছাড়তে পারছেন না, অথচ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন, সিগারেট না ছাড়লেই নয়। অন্যজন মদ্যাসক্ত ছিলেন, এখন ছেড়ে দিয়েছেন। না, সিগারেটের নেশা তাঁর নেই। তিনি  নিজেকে দেখিয়ে বন্ধুকে বলেন, আমি মদ ছেড়ে দিতে পারলাম, আর তুই সিগারেট ছাড়তে পারছিস না। অন্য জনের যুক্তি, মদ তো খেতিস একবার শুধু সন্ধ্যে বেলায়।  ও ছাড়া এমন কি আর কেরামতি। আমি সিগারেট খাই দিনরাত, সব সময়, দিনে অন্তত দশবার। সেটি ছাড়া কি মুখের কথা। তবে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি। একেবারে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, একটা করে কমাচ্ছি। এই যেমন সামনের মাস থেকে প্রতিদিন গুনে গুনে নয়টির বেশি খাবো না। 


  আমাদের ধর্মের নেশাটিও ঠিক এমনটাই। ভোর থেকে দুপুর রাত, এমনকি রাত্রির মধ্যেও, জীবনের প্রতিটি কাজেই ধর্মের অনুষঙ্গ। নেশা যাতে কেউ ছাড়তে না পারে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা।


 দুটি লোকের দেখা হচ্ছে, “আসসালামু আলায়কুম, ওয়ালেকুম আসসালাম, ওয়া বরকাতুহু,  আল্লাহ তোমার কে আশির্বাদ করুক, তোমার ধনবৃদ্ধি ঘটুক”, গুরুর জয়, রামকৃষ্ণের জয়, সারদার জয়, শ্রীরামের জয়, বাবার জয়, মাতার জয়। এর মূল লক্ষ্য আপনার নেশাকে প্রতিক্ষণে জাগিয়ে রাখার কৌশল। এগুলি হলো নেশা চাগিয়ে তোলার  মন্ত্র। অন্ধকারের উপাসনা।

 এই উপাসনা মানুষকে করে তোলে নির্বোধ। করে তোলে স্বার্থপর। শেখায়, তুমি একা। এসেছ একা, যাবে (কোথায়?) একা। এরা ভিক্ষা দেয় স্বর্গের লোভে, অপরের পাশে দাঁড়ায় স্বর্গের লোভে। এরা জানে এটা তার নিজের ধর্ম। এটা আছে বিপদে। অতএব  মনের মাঝে পুষে থাকে এক ঘৃণা।  প্রতিনিয়ত চলে এই কু-শিক্ষা।

 মহালয়া। তর্পন করে। পিতৃপুরুষের আত্মাকে তিল জল খেতে দেয়। জিজ্ঞেস করি, তাহলে যে শুনেছিলাম আত্মা কিছু খায় না। আর আমায় কিছু খেতে দাও, খাওয়ার পর, দেখ প্লেট খালি। 

তোমরা যে খেতে দাও আত্মাকে, খাবার কি চোখের সামনে ভ্যানিশ হয়?

তাহলে আত্মা খাচ্ছে কিভাবে বুঝলে?

 আত্মা খাচ্ছে না, কারণ আত্মা নেইই। 

 আর যদি থাকেই, সে আত্মারও জাত সম্প্রদায় আছে। হিন্দু আত্মার পূনর্জন্ম হয়। মুসলিম, খৃষ্টান,  ইহুদি আত্মার পূনর্জন্ম হয় না।

 আত্মা অন্য জন্ম নেয়, এই যদি আপনার বিশ্বাস হয় তাহলে, তাহলে সে কিভাবে সে আপনার তর্পনে সাড়া দেবে? সে তো ইতোমধ্যেই জন্ম নিয়ে বড় হয়ে হয়তো সেও এক মৌলানা অথবা চারর এর ফাদার। ও হিন্দু আত্মা শুধু হিন্দুই হয়। তাহলে হয়তো সে বড় হয়ে আজ তার নতুন বাবার তর্পন করছে। তাহলে আপনি কেন তার তর্পন করছেন?

 অর্থাৎ একই সাথে দুই বিপরীত কাজ করে বোঝাচ্ছেন, ধর্ম আপনার যুক্তিবাদী মানুষকে অন্ধ করে দিয়েছে। 

 ধর্মে কোনো যুক্তি চলে না।

একজন মুসলিম বিশ্বাস করে হজরত মোহাম্মদ গাধায় চড়ে মাহাকাশ ভ্রমণ করেছিল। আমাদের মহাপুরুষেরা ধর্মের এজেন্ট। প্রতিটি মুহূর্তে তারা মানুষকে অন্ধকারের উপাসনার শিক্ষা দিয়ে চলে। সমাজে তা প্রতিষ্ঠা পেয়ে আসছে।

 এ জগদ্দল পাথর সরানো একদিনের কর্ম নয়, জেনেই যুক্তিবাদীরা আলো আনার প্রচেষ্টা করে চলেছেন। নিরন্তর। নিরলস।

স্বাধীনতার অমৃত -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 21, 2024 | যুক্তিবাদ | views:290 | likes:0 | share: 0 | comments:0

স্বাধীনতার অমৃত, তার উৎসব,  মহোৎসব মানে মচ্ছব।  ১৯৪৭ এর এই রকম এক আগস্টের ১৫ তারিখে,  ভারত লাভ করেছিল স্বাধীনতা। কী পেয়েছিল তাতে আম জনতা? তার আগে দেখি আমাদের নেতারা কী পেয়েছিল। তারা পেল দুটো দেশ। একটা ভেঙে দুটো। তাই দুটো রাজা, দুটো মন্ত্রী, দুটো সেনাপতি, মন্ত্রী সান্ত্রী পাত্র মিত্র কোটাল, সব দুটো দুটো করে। যথার্থ স্বাধীনতা পেল এরাই। স্বাধীনতার প্রভুত্ব চালাবে এরাই প্রজাদের উপরে। দিন-মাস- বছরের একক, দশক, শতক ধরে।

এ নাহয় গেল নেতাদের কথা। এখন বলি তাহাদের কথা, মানে আম, জাম, আতা-জাতীয় জনতার কথা। তারা পেল সদ্য স্বাধীনতার অভিশম্পাত। দেশ ভাগ। নিজ দেশে পরভূম। রাতারাতি জানলো, এই দেশটা ওদের, তোমাদের দেশ তো ওপারে। যথেচ্ছ লুঠতরাজ, খুনখারাপি, দাঙ্গা। অনেক লড়াইয়ের শেষে, নিজের দেশে এসে, জুটলো তাদের ক্যাম্প নামক নরক। সেখানে পেল তারা নতুন নামঃ রিফিউজি। উদ্বাস্তু ক্যাম্পে এসে নরকযন্ত্রণা সহ্য করতে করতে তারা ভাবলো, এর নাম তাহলে স্বাধীনতা? কেন এমন হলো। কে দায়ী এই যন্ত্রণার দেশভাগে?

 দায়ী তো আমরাই। হ্যাঁ আমরাই। কিভাবে? সেটাই আজ বলি। ছোট থেকে বাবা, মা, পরিবার, সমাজ, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, মহা মহাজ্ঞানীদের শিক্ষায়, বলা ভাল কুশিক্ষায়, অন্ধ বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়েছি চোখ বুজে। ধর্মের পথে চলেছি। ধর্মের প্রতি ভক্তিতে ভক্তিতে খুইয়েছি মানবিকতার পাঠ, মনুষ্যত্বের ভাষা। ধর্ম বুনে দিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বীজ। ধর্ম করে দিয়েছে অন্ধ। তাই দেশভাগে নেতারা বোঝালে, তুমি হিন্দু, কাজেই ঐ দেখ হিন্দুস্থান, ওটাই তোমার দেশ, ওটাই তোমার আবাসস্থান। ওখানে তোমার ধর্ম সুরক্ষিত। নাহলে তোমার ধর্ম আছে খতরে মে।

  ধর্মের কাজই তো অন্ধত্বের চাষ। এই চাষে লগ্নী করে ধনীরা, বেনিয়ারা। তারাই বানায় ধর্মের নেতা, রাজনীতির নেতা। এদের চাকরি হলো তোমায় বোঝানো। তুমি মুসলমান, ধর্ম তোমার খতরে মে। ধর্ম করে দিয়েছে অন্ধ। তাই দেশভাগে নেতারা বোঝালে, তুমি মুসলমান,  ঐ দেখ পাকিস্তান, ওটাই তোমার দেশ, ওটাই তোমার আবাসস্থান। ওখানে তোমার ধর্ম সুরক্ষিত। ওখানে গড়তে পারবে তোমার ধর্মের রাষ্ট্র। 

 দেশ হলো স্বাধীন। যারা স্বাধীন হলো, তারাই খেতে পেলে অমৃত। সেই শুরু। সেই স্বাধীনতার অমৃত খেয়ে চলেছে দেশের দু আনা লোক, দেশের চৌদ্দ আনা সম্পদের অধিকারী তারা। আর বাকি চৌদ্দ আনা লোক, পেল দু আনা সম্পদ, দেশভাগের যন্ত্রণা, সাম্প্রদায়িকতার গরল। কারণ দেশভাগের বীজ তো তোমার মজ্জাতেই, তোমার ধর্মবিশ্বাসে, তোমার জীবন বোধে। তোমার জীবন দর্শণে।


 তাই যখন মুক্ত চিন্তা করতে দেখলেই রে রে করে তেড়ে আসি, তাড়িয়ে তাদের ঘর ছাড়া করি, দেশছাড়া করি, মারি, ধরি, খুন করি, তখন কি ভেবে দেখবে না, কে দায়ী এর জন্য? একবার তোমায়, ভেবে দেখার আর্জি জানাই, তোমার এই বদ্ধ চিন্তন, এই অন্ধ ধর্মবিশ্বাস, এমনি ভাবেই লুট-পাটের পথ প্রশস্ত করবে ঐ ধনীদের, বেনিয়াদের, নেতাদের, ধর্মগুরুদের। যখনি ধার্মিক তথা ধর্মান্ধের দল, সামনে "কুকুর বেড়াল মেরো না, নাস্তিক পেলে ছেড়ো না" লেখা ফেস্টুন সাজিয়ে মিছিল করে, মুক্তমনাদের ভয় দেখাতে চেষ্টা করে, তাদেরকে অত্যাচার করার নানান আইন বানায়, তাদের উপর নানান ফন্দি ফিকিরি কানুন চাপায়, তখন স্মরণ করিয়ে দিই, গায়ের জোরে ধর্ম প্রবর্তকদের অন্যায়, অনীতি,  অনাচারের ইতিহাস চাপা দেওয়া যায় না, তাদের প্রণীত ধর্ম গ্রন্থের অন্যায়গুলিকে ন্যায় বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, ভুল গুলিকে সঠিক বলে  প্রচলিত করা যায় না, মিথ্যাগুলিকে সত্য বলেও চালানো যায় না। মুক্তমনে শিখলে, জানলে, পড়লে, ভাবলে সে সব মিথ্যা স্পষ্ট হয়ে যায়, ধর্মের ফানুশ ফেটে কোথায়  যে ভ্যানিশ হয়ে যায়, তার চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। 

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কত শত ধর্ম, যারা দাবী করেছিল, তাদেরটাই একমাত্র সত্য ধর্ম, ঠিক তোমরা যেমন দাবী করে থাকো, কালের কবলে কোথায় যে হারিয়েছে তার ইয়ত্তা পাওয়া যায় না, নাম ঠিকানা হারিয়ে আজ সে সব সত্য ধর্ম মানবজাতির স্মৃতির অতল  থেকেও বেপাত্তা। তাহলে বোঝা গেল তো, কেমন স্বাধীনতা। কেন দেশভাগের যন্ত্রণা, কে দায়ী তার জন্য?

এই দেশভাগের বীজ আমাদের ধর্ম বিশ্বাস। সে বীজের অঙ্কুর বেরোনোয় দরকারী বাতাস দিয়েছে আমাদের ভক্তি-নিঃশ্বাস। চারার বৃদ্ধিতে  জলসেচ দিয়েছে আমাদের অন্ধ বিশ্বাস। সে বিষবৃক্ষ এখনো বেড়ে চলেছে।


কাজেই বন্ধু এখনো যদি না জাগো, এখনো যদি না চিন্তা করো মুক্তভাবে, এখনো যদি না পরিত্যাগ করতে পারো আজন্ম লালিত অযৌক্তিক জীবনাচরণ, যাকে তুমি ভেবেছো তোমার জীবনের আদর্শ, এখনো যদি না ত্যাগ করতে পারো তোমার হিন্দু-সত্তা, মুসলিম-সত্তা, তাহলে স্বাধীনতার অমৃত খেয়ে যাবে ওরাই। যুগ যুগ ধরে। তোমার জন্য উপহার অশিক্ষা, শিক্ষার নামে ধর্মশিক্ষা, কুশিক্ষা; আধুনিক চিকিৎসার নামে হোমিওপ্যাথীর চুষিকাঠি, মান্ধাতার আয়ুর্বেদ, চিকিৎসার নামে অভ্যাসের শৈলী যোগ,  স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নতির নামে আরো শোষণ। তোমার জন্য উপহার বেকারত্ব, চাকুরির নামে শোষণ। শোষণ, শোষণ আর শোষণ। রাষ্ট্র ক্ষমতা কায়েম করে শুধু শোষণ আর শোষণ। 

নির্বিবাদে এই শোষণ চালানোর জন্য মুক্তমনের চিন্তনকে দমন করা, চাপা দেওয়া জরুরি। তাই রাষ্ট্র মুক্ত চিন্তনের বিরুদ্ধে। ধর্ম বিশ্বাস প্রচলিত রাখতে লগ্নী করে বিভিন্ন দিক দিয়ে। ধর্ম বিশ্বাসরূপ অন্ধবিশ্বাসকে সুশিক্ষা বলে চালাতে সমর্থন যোগায় সকল দিক দিয়ে। 


কিন্তু ফাঁপা ঢেঁকির শব্দ আচকিত করে মাঝে মাঝেই। ধর্ম বিশ্বাস ফোঁড়া ফেটে পুঁজ বেরোয় হর হামেশাই। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, এইসব স্বাধীনোত্তর দেশের সংখ্যালঘুরা, দলিতেরা  নিপীড়িত হয় ধর্মবিশ্বাসের "সুশিক্ষার গুণে"। দেশের সেই '৪৭ এর ১৫ই আগস্টে কিংবা আবার পরে '৭১ এর  ২৬ শে মার্চে স্বাধীনতা পাওয়া প্রভুরা, রাজারা, মন্ত্রীরা তাদের মহারাজ বেনিয়াদের দেওয়া চাকুরির দায়িত্ব পালন করে চলে অন্ধবিশ্বাস চাষের কর্তব্যে। ব্রেন ওয়াশড ধর্মগুরুগুলিও পুরোদস্তুর ময়দানে নেমে দায়িত্ব পালন করে চলে আরো আরো ব্রেইন ওয়াশ করার "শুভ কর্মপথে"। 

 আর ব্রেন ওয়াশ করতে পারলেই কেল্লা ফতে। আজকাল বিভিন্ন লেখায় দেখা যায় অমুক ধর্ম গুরু স্বাধীনতা আন্দোলনে হ্যান করেছিল, ত্যান করেছিল। ধর্মগুরুর বৌটিও না কি স্বাধীনতা সং গ্রামে  প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কত কি সাহায্য করেছিল। স্বাধীনতা সং গ্রামের বিপ্লবী, জীবনের প্রথম দিকে অনেক কাজই করেছেন, কিন্তু পরে ধর্মের আঁধার আশ্রয়ে গিয়েছেন। ধর্মের লোকেরা কিন্তু তার আলোকিত জীবন নিয়ে যত না আন্দোলিত, তার অন্ধকারময় কাপুরুষকার জীবনকে আলোকিত বলে বলে শতগুণ উচ্ছ্বসিত, অন্ধকারময় কাপুরুষিক জীবনকে, তার জীবনের মিথ্যাকে, সত্য দর্শণ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে সহস্রমুখে গোয়েবেলসীয় প্রচারে উৎসর্গীকৃত। হায়, বিশ্বকে বিপথে চালিত করতে ধর্মবিশ্বাসের জুড়ি নাই। তাই এই পথকেই নির্দ্বিধায় বেছে নেয় রাজা তৈরির মালিকেরা। দেশের সব শোষণের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখে এভাবেই।

  স্বাধীনতার লড়াই লড়েছিল ভগৎ সিং। স্বাধীনতার জন্য। মুক্তির জন্য। বলেছিল, মুক্তি মানে সকলের জন্য খাদ্য, সকলের জন্য আবাস, সকলের জন্য সুশিক্ষা, সকলের জন্য কাজ, সকলের জন্য নিরাপত্তা, সকলের জন্য বাঁচার অধিকার। মুক্তি মানে শোষণহীন সমাজ। মুক্তি মানে অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর কাজ।  অন্ধবিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস তাই সমাজের ক্যানসার। এর সঠিক চিকিৎসা হলো মুক্ত মননের পরিচর্চা, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পাঠদান, যুক্তিশীল মানসিকতা গঠনের পরিসর নির্মাণ।


কিভাবে হবে সেই নির্মাণ?

ধার্মিকেরা যেমন যুক্তিবাদীদের মারে, ধরে, হত্যা করে, যুক্তিবাদীরা কি পাল্টা মার দেবে? খুন করবে? ধার্মিকেরা যেমন যুক্তিবাদ দমনের জন্য ব্লাসফেমি আইন বানায়, এই আইনের বলে মুক্তচিন্তনশীল লোকেদের উপর অত্যাচার চালায়, যুক্তিবাদীরাও কি পাল্টা এসব করবে?

মোটেই না। যুক্তিবাদীদের মূল শক্তি হল তাদের যুক্তি, তাদের যুক্তিশীল মানসিকতা, তাদের সত্যকে সত্যরূপে বোঝার ক্ষমতা। 


 ধার্মিকদের ধর্মগ্রন্থের অসারতা,  অন্যায়, অনৈতিকতা যুক্তিনীষ্ঠভাবে দেখিয়ে দেওয়াই যুক্তিবাদী আন্দোলনের মূল কাঠামো।

মানুষ কিন্তু ভিত্তিগতভাবেই র‍্যাশানাল। তাকে বোঝানো আদৌ কঠিন নয় যে গাধা আকাশে উড়তে পারে না। ঢেকিও না। সূর্য কোনো ছোট্ট নরম কবোষ্ণ রুটি নয় যে বানর, হনুমানে তা বগলে পুরে নেবে। বানরে উড়তেও পারবে মন্ত্রবলে, এ বিশ্বাসে তাদের মনে দ্বিধাই মেশায়। চাঁদ কোনো খেলনা নয় যে তাকে কেউ দ্বিখণ্ডিত করার পর সেটি পৃথিবীতে নেমে এলেও পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হয় না তো বটেই, সেটিকে আবার আঙুলের ইশারায় জুড়েও দেওয়া যায়। এসব যে আষাঢ়ে গল্প তা বুঝতে কারুর বিন্দ্যমাত্র কষ্ট হয় না। এই রকম ধর্মগ্রন্থ দিয়েই তাদের অন্ধবিশ্বাস ভাঙতে হবে।       

চেতনা বিকাশের হাতিয়ার -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 19, 2024 | যুক্তিবাদ | views:883 | likes:0 | share: 0 | comments:0

একটা বেশ সাত্বিক সাত্বিক গন্ধ মাখা কথা আমাদের সমাজে বেশ চালু। ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না। ধর্ম থাকুক ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি থাক রাজনীতির জায়গায়।


আসলে আমরা ধর্মের ইতিহাস অনেকে জানি না, অনেকে আবার জেনেও অজানাদের মতই অসচেতন। মানব জীবনে রাজনীতি এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার সাথে ধর্মীয় কিছু আবেগ মিশিয়ে দিতে পারলেই স্বার্থ সিদ্ধ হয়, সংগঠিত করার কাজ সহজ হয়। এ কথা বোধহয় আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে ধর্মীয় স্বার্থ আর রাজনৈতিক স্বার্থের সার্থক ককটেল একটা বাজারে ছাড়তে পারলেই, জনগণের মনের তৃষ্ণা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়ে সেই দলটির 'আমি তোমাদেরই লোক' ভাবটির যে ভাবে স্পষ্টকরণ সম্ভব; তা বোধহয় শত বক্তৃতা বা হাজার কাজের বাস্তবায়ণের মাধ্যমেও ফলপ্রসূ দেখি না।


মানুষ মূলগতভাবে প্রথমত একটি প্রাণী। সামাজিক প্রাণী। মানবেতর অন্যান্য প্রাণীর প্রায় খাড়া দ্বিপদ প্রাণী। তিনি মানুষ হয়ে উঠতে পারেন শুধুমাত্র তাঁর যুক্তিবাদী চেতনা গ'ড়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে। এই চেতনা গ'ড়ে ওঠার পথে সহস্র প্রতিবন্ধকতা।


প্রথম থেকেই শিশুর শিখনকালে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, কুশিক্ষা ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা জগৎ ব্যাপী বিস্তৃত। শিশুর মনে ভূত, প্রেত, ঈশ্বর বিশ্বাস প্রভৃতি অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার প্রবিষ্টকরণের কাজে অভিভাবক, প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষালয় এক কথায় সমগ্র সমাজ যেমন উঠে পড়ে লাগে তাতে সেই শিশুটিকে কুসংস্কারাচ্ছান্ন করে গড়ে তোলার লব্ধ মিশন লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সামান্যতম সুযোগ থাকে না। এই চক্রব্যুহ ভেদ করেও যাঁরা কেন, কী, কোথায়, কবে, কীভাবে , প্রশ্ন করতে শেখেন, চিন্তা করেন, চিন্তা করার সাহস পান, তাঁদের বলা যায় যুক্তিবাদের পথের পথিক, অর্থাৎ যুক্তিবাদ সম্পন্ন প্রাণী -মনুষ্য। যুক্তিবাদ বিবর্জিত প্রাণী মনুষ্য পদবাচ্য হতে পারে কি? 


অবশ্য আজ পর্যন্ত এমন কাউকে আমি দেখিনি, যিনি নিজেকে কুসংস্কারগ্রস্ত, নিজেকে অন্ধবিশ্বাসী মনে করেন। সকলেই নিজেকে যুক্তিবাদী মনে করেন। ধর্মের কুসংস্কার প্রচার করা যারা পেশা হিসাবে নিয়েছেন, তাদের নামের সামনে দেখি, যুক্তিবাদী বিশেষণ। হাসি পেলে হাসি চেপে চুপে থাকাই সেখানে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ দশচক্রে পাথরকেও ভগবান বানানো হয়। হাসি চেপে রাখতেই হয় যখন কাঠের তৈরী ঠাকুরের হেলথ চেক আপ করেন এম বি বি এস, এম ডি ডাক্তারে, কাঠের বুকে সত্যিকারের স্টেথোস্কোপ ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে। 


বন্ধু বলার কিছু নেই, এভাবেই কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের যূপকাষ্ঠে শিক্ষার বলি ঘটে প্রতি মুহুর্তে। 

 

রাজনীতি ছাড়া তো সমাজ চলে না। ধর্মকেও এতটাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ব্যক্তিক জীবনশৈলীর প্রতিটি ক্ষেত্র জুড়ে আছে ধর্ম, কুসংস্কার৷ অন্ধবিশ্বাস। যুক্তিবাদীদের নিয়েও মানসিক প্রমোদ লাভের মেনু উপভোগ করতে পারেন কবজি ডুবিয়ে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের খাদ্য ভক্ষণ থেকে পানীয় পান করে ঢেঁকুর তোলা পর্যন্ত। তারপর কুশিক্ষার পান চিবানোর পর্ব সম্পূর্ণও বাদ যাবে না।


ভূতে বিশ্বাসকে অনেকেই যুক্তিবাদের বিপরীত গোষ্ঠীভুক্ত করেন। খ্যাতনামা এক সাহিত্যিক, যিনি নিজেকে যুক্তিবাদ বিবর্জিত প্রাণী বলে আদৌ মনে করেন না বলেই জানি, তিনিও অকপটে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভূত আছে, চতুর্দশীতে তেঁনাঁরাঁ এসেও থাকেন।

 

ভূতে অবিশ্বাসী যুক্তিবাদীরা আবার ভগবানে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে থাকেন। 

আরও দেখবেন, ভগবানে অবিশ্বাসীরা আবার জ্যোতিষকে বিজ্ঞান বলে চেঁচিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে থাকেন। বিজ্ঞান ক্লাবের কর্তাব্যক্তিদের হাতেও দশ আঙুলে দশাধিক স্টোন সমন্বিত আংটির শোভা দেখে মূর্ছা-ভাব কারুর অভিজ্ঞতায় থাকাটা স্বাভাবিকের থেকেও বাস্তব। 


আবার জ্যোতিষকে অবিজ্ঞান অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার বলে বুঝেছেন, তাঁদের মাঝেও অনেকের কাছে হোমিওপ্যাথি নিয়ে বলুন, সেই জ্যোতিষ বিরোধী যুক্তিবাদীমন্য লোকেও রে রে করে উঠবে। 


এ হ'ল যুক্তিবাদীদের এক ঝলকের পরিচয়।

খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যখন যুক্তিবাদীরা তাদের একজন গুরুকে খাড়া করে দেন। আবার সেই গুরুর দলে কয়েকদিন ঘোরাঘুরির পর যখন কলিকালাভ না হওয়াতে গুরুবিরোধিতার শক্তি অর্জন করতে ভূতান্বেষী বিজ্ঞানীদের ধরে ঝুলে পড়েন। 


এরা নিজেদের মধ্যে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে এমনভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেন যে এ নিয়ে অলিম্পিকে ইভেণ্ট থাকলে নির্দ্বিধায় সর্ব জাজের সম্মতিক্রমে উভয়পক্ষকেই প্রথম স্থানাধিকারী হিসাবে ঘোষণা করা যেতে পারতো।

যুক্তিবাদী আন্দোলনের কত বড় ক্ষতি এঁরা করে চলেছেন, তার তল পাওয়া দুস্কর।

তাহলে উপায়? সব ছেড়েছুড়ে হাত গুটিয়ে ব'সে থাকবো? 


না হাজার পথ খোলা। পথই পথ দেখাবে। 

পেশী শক্তির বিকল্প মসি শক্তি। 


কলম ধরতে হবে। ওটাই যুক্তিবাদী চেতনা বিকাশের হাতিয়ার।

অজ্ঞানতার বিজ্ঞাপন -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 19, 2024 | যুক্তিবাদ | views:889 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ধর্ম প্রকৃতই অন্তঃসারশূন্য। তবুও চারিদিকেই তার ব্যাপ্তি। এই বিস্তৃতির কারণ কী? মেজোরিটি ম্যাটারস। বিজ্ঞাপন আমাদের জীবনকে অনেকটাই  চালিত করে থাকে। নাস্তিকতা  মানুষকে অর্জন করতে হয়। ধর্মকে অর্জন করতে হয় না। জন্মের সাথে সাথেই তা ঘাড়ে চড়ে বসে।

মানুষ ধর্মকে অর্জন করে না গ্রহণও করে না। আবার বলতে গেলে বর্জনও করে না। বর্জন করতে চাই শিক্ষা।  ধর্ম হল  তার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া এক অন্ধবিশ্বাসের গুপ্তধন। যা নিয়ে সে বেশী নাড়াঘাঁটা করেও দেখে না। বরং ভক্তি ছেদ্দা করে কুলুঙ্গিতে তুলে রাখে। তাই তার স্বরূপ বিশেষ বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করে না।

ছোট থেকেই তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবিষ্ট হতে থাকে ধর্মের নানান রিফ্লেক্স। অনুপ্রবিষ্ট হতে থাকে ধর্মাহংকার। তাই ধার্মিক মাত্রেই গর্বিত হিন্দু না হয় গর্বিত মুসলমান নাহয় গর্বিত অন্য কিছু। ধর্ম গর্বে গর্বিত। জীবনে আর সকল সমালোচনা স্বাগত হলেও, ধার্মিকের কাছে তার ধর্মের সমালোচনা মানেই এক নিষিদ্ধ বস্তু। ধর্মের সমালোচনায় ধার্মিক একেবারেই অসহিষ্ণু। ধর্মে প্রশ্ন নিষিদ্ধ। প্রশ্ন কোরো না।

শিশু এভাবেই বড় হতে থাকে। সে যত বড় হয়, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার কুসংস্কার। তার অন্ধবিশ্বাস। জীবনশৈলীতে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে জড়িয়ে মানবিক যুক্তিশীলতার রস শুষে জীবনকে একটা দাসত্বের আধারে পরিণত করে। ধর্মের দাস হয়ে সে তখন গর্বিত ধার্মিক। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার নির্বোধ প্রতিমুর্তি।

রাস্তার ধারে দেখবেন, হলুদ রঙের এক ধরণের লতা। কোনো গাছকে আশ্রয় করে বাড়ে। গাছটিকে ঢেকে ফেলে। গাছে রস খেয়ে তাকে ছিবড়ে করে দেয়। গাছটির নিজস্বতা আর থাকে না। বাইরে থেকে দেখতে সে যতই হোক না সোনার মতো লতা শোভিত। সোনার লতায় ঢেকে গিয়ে সে যায় লুকিয়ে।  তার কত না শোভা।

ধর্ম মানুষের যুক্তিশীল মনকে একেবারেই শেষ করে দেয়। ধর্মশৈলী প্রতিনিয়ত মানুষের যুক্তিশীলতার রস শুষে তাকে আর মানবিক ভাবনা ভাবানোর যোগ্যই রাখে না। 

একটা উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলো, তাদের দলে যারা আসবে, তারা ক্ষমতা দখল করলে, খুন-ধর্ষণ-মদ-নারী বিলাসিতার ব্যবস্থা তারা করে দেবে। কী বলবেন? তাদের প্রতি আপনার মনোভাব কেমন হবে? এখন দেখবেন, ধর্মের ব্যাপারটাও তেমনই। দেখবেন, প্রায় প্রতিটি ধর্মে,  স্বর্গ,  স্বর্গে আমোদ প্রমোদ বিলাস ব্যসনের প্রলোভন দেখায়। মানুষকে প্রতিনিয়ত কুসংস্কারের অনুশীলনের মাধ্যমে তাতে বিশ্বস্তও করে তোলে।

  মানুষ নির্বোধ হলে নির্লজ্জও হয়ে থাকে।

দেখবেন, যারা হোমিওপ্যাথীর পক্ষে তারা জানেনই না যে উচ্চমাত্রার হোমিওতে এক বিন্দুও ওষুধ থাকে না। অথচ তারা ঔষধবিহীন চিকিৎসাতেও আগ্রহী নন। আসলে তাঁরা এই অজ্ঞানতা হেতু হোমিওতে আস্থা রাখেন। যাঁরা আঙুলে আংটি নিয়ে ঘোরেন, তাঁদের অজ্ঞানতার কারণেই এইসব স্টোন ধারণ করেন। ধারণ করেন, তবু লজ্জাও পান না।

এই নির্লজ্জতা গোটা সমাজে।

বহু কিছু পড়া শুনা করেছেন। ডিগ্রীও অর্জন করেছেন। এঁরা আত্মা মানেন, ভূত মানেন না!

যিনি আত্মা মানেন, ভগবান মানেন, ভূতও মানেন, তাকর মানামানির ব্যাপারটা বোঝা যায় যে নির্বুদ্ধিতার চূড়ায় থাকলে লজ্জার বালাই থাকেনা। নির্লজ্জভাবে আঙুলের আঙটি প্রদর্শনে এতটুকু কুণ্ঠিত নন। কিন্তু যিনি ভগবান মানেন, কিন্তু ভূত মানেন না, তাঁর লজিক বিশ্বাসসর্বস্ব লজিক।

ধার্মিকদের ভক্তি এক আজব বস্তু। ভক্তি যার স্কন্ধে ভর করে তাঁকে বলা হয় ভক্ত। প্রায়শ শিক্ষিত ধার্মিকে বলে থাকেন, তিনি সর্ব ধর্মের ভক্ত। নানা ধর্মে নানান বৈপরীত্য। কোনটি একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, কোনটি বা বহু-ঈশ্বরে। সব ধর্মের ভক্ত অবশ্য  'এক = বহু'   ভাবতে সাগ্রহে অভ্যস্ত। একে নিছক মূর্খামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি?

  এবার এক নামকরা চিকিৎসকের কথা বলি। ইনি চিকিৎসাক্ষেত্রে এক অতি খ্যাতনামা ব্যক্তি। আমার সাথে কথায় কথায় জানালেন, উনি মকর স্নানে যাচ্ছেন। শুনে প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম, আমরা সাধারনত ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার এমনকি শিক্ষকদেরও শিক্ষিত বলেই ভেবে থাকি।

এই চিকিৎসক ভদ্রলোকের কথাই বলি। ইনি বারো ক্লাসের পর থেকেই মেডিকেলে। ফিসিওলজি, অ্যানাটমি, মেটিরিয়া মেডিকা, ডিসেকসন, ফার্মাকোলজি নিয়েই তাঁর জগৎ।

তিনি তাহলে শিক্ষিত হলেন আর কখন? অথচ দেখুন, তাঁকেই আমরা অনেকে বুদ্ধিজীবির দলে ফেলি।

যে ভদ্রলোক জীবন বোধের সিনেমা দেখেন, লাইব্রেরী থেকে বই এনে নিজের ছোট দোকানটিতে বসে বইটি পড়ে চলেন, দোকানে আসা লোকের সাথে সমাজ অর্থনীতি ধর্ম রাজনীতি নিয়ে নিজের মতামত উপস্থাপন করেন, তাঁর ডিগ্রী দেখে তাঁকে আমরা অনেকেই

শিক্ষিত বলতে আদৌ রাজী নই। এখানে নিহিত আছে ধর্ম ব্যাপ্তির সূত্র। অজ্ঞানতাই হ'ল ধর্ম ও ধার্মিকতার ভিত্তি।

গড্ডালিকাপ্রবাহে চিন্তাস্রোত অপরের ধারায় প্রবাহিত। এতে কখনই মনুষ্যত্বের বিকাশ হতে পারে না। অন্ধবিশ্বাস থাকে তাঁর মনে সারা জীবন। অশিক্ষা থেকেই যায়।  মূর্খামির জানান দেখা যায় ধর্মাচরণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত। তিনি নিজের মূর্খামির খবর জানতে পারেন না সারা জীবনেও।

   যে সকল ধার্মিক নিজেদের যুক্তিবাদী মনে করেন, তাঁরা চিন্তা করুন, আপনার ধর্ম কেন বাস্তব জমির উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠীত করতে পারেনা। কেন তাকে অলীক অলৌকিক মিথ্যার শরণাপন্ন হতে হয়।

জন্ম যার মিথ্যাচার দিয়ে, সে জিনিস কিভাবে আপনাদের কাছে এত গ্রহণযোগ্যতা পায় কেন?

একটু ভাবুন। ভাববাদী কথা দিয়ে গোঁজামিল দিয়ে কখনই সত্যকে আশ্রয় করা যায় না।

সেকালের ভূত, এ কালের বিজ্ঞান, আর আমাদের ভবিষ্যত। -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 18, 2024 | ভূত | views:1589 | likes:45 | share: 0 | comments:0

শিশুর মনে কিভাবে ভূতের অস্তিত্ব শিকড় বিস্তার করে, তা আমার নিজের শৈশব দিয়েই বিচার করি। অনেকের শৈশবের  ঘটনাও একই প্রকার।

   এক্কেবারে অজ পাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, তা হ'ল আমাদের সেকালের গ্রামটি। গ্রামে ঢুকতে হলে শীতে ধুলো আর বর্ষায় কাদা মাখতেই হবে। গাছপালা, বাঁশবাগান এত ছিল যে দিনের বেলা বাঁশতলায় সুর্যের আলো নিচে আসতে পারতো না। তাতে দিনেই ভূতুড়ে ভূতুড়ে আবহাওয়া গড়ে উঠতো, রাত্রে তো ভূতেদেরই বাজত্ব।

সেকালে ভূতের ভয়ে গাঁ-গ্রাম ছিল তটস্থ। সন্ধ্যে হলেই ভূতের ভয়ে রাস্তা ঘাটে লোকজনের বিশেষ দেখা মিলতো না।

শিশু প্রথমত প্রাথমিক শিক্ষা পায় তার মায়ের কাছে। আমিও পেয়েছিলাম। মা বলতো, সে এক সন্ধ্যার ঘটনা। তোর বাবা ইলিশ আনলো যখন,  তখন ভর সন্ধ্যেবেলা।  হাট থেকে ফিরতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। তাই মাছের গন্ধে সঙ্গ নিয়েছিল "তেনারা"।  বলতো এঁকটাঁ মাঁছ দেঁনা। এঁকটাঁ মাঁছ দেঁনা। দিদি গুটিসুটি মেরে কাছে এসে সন্দেহ প্রকাশ করতো,”সত্যি মা? “আমরা কিন্তু মায়ের কথা চোখ বুজে বিশ্বাস করতাম। কক্ষনো সন্দেহ করতাম না।

সেই মাছ বেছে যেই না পুকুর ঘাটে ধুতে যাবে, অমনি শাঁকচুন্নি একটা বাঁশ শুইয়ে ধরতো। সেটা পার হতে গেলেই সটাং করে তুলে ধরবে। মা তো ভীষণ রেগে বকা ঝকা দিত। সুরা ইয়াসিন পড়বো? বলে ভয় দেখাতো। শাঁকচুন্নিটা বিপদ বুঝে বাঁশবাজি বন্ধ করে পালাতো।

  ঘুমাবার সময় বাবাও বলতো তার নিজের জীবনের ঘটনা। আমাদের লাঙল  চালানোর নাঙলা ছিল মকর কাকা আর বুধন কাকা। বাবার ছিল ছোট্ট একটি বিড়ি কারখানা- কাম- বই- খাতা-মনিহারি-চাল-ডিম- তেলের পাঁচমিশেলি দোকান। সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে আসার সময় তিনজনে প্ল্যান করলো, পরের দিন ভোরে পুকুরের মোয়ানের খালে দু দিকে বাঁধ দিয়ে বালতি করে জল সেঁচে তুলে ফেলে দিয়ে জুলির পাঁকাল, ট্যাংরা, চ্যাঙ, ল্যাটা, মাগুর, সিঙি ধরবে।

রাত তখনও আছে, ভোর হয়তো হবে হবে করছে, বুধন কাকা এসে বাবাকে ডাকে, দাদা, ও দাদা, জল সেঁচতে যাবে না?

দুজনে গিয়ে প্রচুর মাছ পেল। বাবা হঠাৎ দেখল, বুধন কাকা বালতি থেকে তুলে তুলে কাঁচা মাছে খাচ্ছে। চোখের ভুল না কি? কিন্তু না, খানিক পরে একই কাণ্ড। বুধন কাকা আবার একটা কাঁচা মাছ খেল। বাবা বুঝতে পারল, এ তো বুধন নয়, নিশ্চয়ই  বুধনের বেশে মেছো ভূত।

পড়ি মড়ি করে ছুটে এসে বাড়িতে দেখে বুধনকাকা আর মকরকাকা এসেছে জল সেঁচে মাছ ধরার জন্য। তাহলে আগে কে এসেছিল? বুধনকাকাকে সব ঘটনা খুলে বলতেই আর মাছ ধরার জন্য খালে যেতে তাদের সাহসে কুলালো না। এইসব ঘটনা খোদ বাবার মুখে শোনা। কাজেই অবিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠেনা।

আমাদের ছিল শানের মেঝে, মাটির দেওয়াল, টালির ছাউনি দেওয়া লম্বা দুয়ার ওয়ালা ঘর। ঘরের পিছনে একটি বহু বয়স্ক উঁচু নারকেল গাছ। আর সামনে উঠানের পরেই পাঁচিলের বাইরে একটি তালগাছ। তাতে এক বিশাল জীন বাস করতো। নিরুপদ্রবে। তার একটা পা ছিল নারকেল গাছে, অন্য পা বাড়ানো ছিল তালগাছে।  বাবা, মা দুজনেই  গভীর রাতে উঠে স্বচক্ষে দেখেছে বেশ কয়েকবার। কাজেই স্বচক্ষে দেখা জীনেও অবিশ্বাস করার কিছুই নেই।


এই রকম হাজারো ঘটনা আছে। সব বললে লেখাটির প্রায় ওজন হয়ে যাবে তিনমণ। বাবা মায়ের স্বচক্ষে দেখা এতগুলি ভূত কখনো মিথ্যা হতে পারে কি?

পরে দুই একবার আমরা নিজেরাও ভূতের দেখা পেতাম। সেবারে বেদের দল এলো দিঘীর পাড়ে। তাদের  কালো কালো রোগা-সোগা দুটি ছেলে মাদার গাছে উঠে মাদার পাড়ছিল। গ্রীষ্মের দুপুরে সব্বাই যখন ঘুমাচ্ছে, আমি দুটো করঞ্জা পাড়ার উদ্দেশ্যে বার হয়েছিলাম। এক লহমা ছেলেদুটিকে দেখলাম, পরক্ষণেই কোথায় যে উধাও হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। কেন জানি না, একটা ভয় মনে জুড়ে বসলো। করঞ্জা না পেড়েই, দ্রুত ঘরে ফিরে এসে ঘুমন্ত মায়ের পাশটিতে আবার শুয়ে পড়তাম।  মনটা উসখুস করতে লাগলো।

রাত্তিরে মা কে ঘটনাটি বললাম। দিদি তো হেসেই খুন। মা খুব বকাবকি করলো। বললে, সবেতেই হাসিস না, ঐ দুটো ভূতের ছানাকে আমিও ক' বার দেখেছি। ইখলাস, ফালাক আর নাস তিনবার পড়ে আমাদের প্রত্যেকের মাথায় ফুঁ দিতে যেন আমার ধড়ে  প্রাণ ফিরে আসতো। সেই দুটো ভূতের ছানাকে আমরা স্কুলেও বকুলতলায় দেখেছি। সহপাঠীদের বলতেই অনেকে ভূত বলেই সাব্যস্ত করেছিল। অনেকে অবশ্য হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল ওরা বেদেদের ছেলে, চুরিটুরি করে বলে, পালাই পালাই করে। আমাদের কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, সে দুটো ভূতের বাচ্চাই ছিল। আমি তো নিজের চোখেই দেখেছিলাম। এই দেখছি মাদার গাছের ঝোপে। এক মুহূর্ত পরে দেখছি হাওয়া। চুরিই যদি করতে আসে, মায়ের বকুনিকে ভয় পায়, মা তো তখন ঘুমাচ্ছিলো। তাহলে বকবে কে? কাজেই বহু যুক্তি তর্কের পর বুঝেছিলাম ও দুটি বেদের ছেলে নয়, আদৌ নয়। বেদের ছেলের মতো দেখতেই নয়। কেমন যেন ভূতুড়ে ভূতুড়ে। কাজেই ওরা ভূতেরই ছানা। যে পারে ওদের মানুষ বলে বলুক, আমি অন্তত নাস্তিক হতে পারবো না, নিজের দুচোখকে অবিশ্বাস করতে পারবো না।  ভূত না থাকতে পারে, ভূতের ছানা আছেই। ওদুটো ভূতেরই ছানা। আমার স্বচক্ষে দেখা।

এভাবেই বাবা মা'র দেখা ভূত, নিজের দেখা ভূত,  পুকুরে নিজের চক্ষে দেখা জুজুবুড়ির চুল অবিশ্বাস করি কিভাবে?

সেবারে আমাদেরই পাড়ার নতুন এক বৌকে ভূতে না জিনে ধরলো। ভূত- জীন না থাকলে, ধরলো কে? যখন ওঝার সর্ষে পড়া,  ঝাঁটা পড়ায় ছেড়ে যাচ্ছে, তখন জলের ঘড়া খিড়কি দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল কে? ওসব মানুষের কম্ম?

স্কুলে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হল। কেউ কেউ নাস্তিকগিরি করে স্রেফ উড়িয়ে দিলে। এরা কোনো যুক্তিই মানে না। আমাদের দুক্লাস উঁচুর এক দাদা বললে, তার মামার বাড়িতেও এমন ভূত সে নিজের চোখে দেখেছে। ছেড়ে যাওয়ার সময় পুরো ভর্তি জল শুদ্ধু ঘড়া দাঁতে করে নিয়ে গেল। সাথে কাছের একটি উঁচু গাছের মগডালটিও কোত্থাও কিছু নেই,  হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার জোরে ভেঙে দিয়ে তবে গেল। আর সেই ওঝার ঝোলার বোতলে এমন কত আত্মা প্রেতাত্মা বন্দি করে রাখা। এসব যুক্তি অনেকেই মানলো না। গোঁয়ার্তুমি করে সব উড়িয়ে দিলে। আমি অবশ্য মগডাল ভাঙা দেখিনি, কিন্তু স্বচক্ষে ভূতে ধরা - ছাড়া,  কলসি বওয়া তো দেখেছি। তাই আমি তাদের দলে ছিলাম না। ভগবানের সাথে ভূতকেও সমান মর্যাদায় মান্য করে চলতাম।


এবার বলি, সুনীল গাঙ্গুলীর একটা কবিতা ।

এতগুলো শতাব্দী গড়িয়ে গেল, মানুষ তবু ছেলেমানুষ রয়ে গেল

কিছুতেই বড় হতে চায় না

এখনো বুঝলো না ‘আকাশ’ শব্দটার মানে

চট্টগ্রাম বা বাঁকুড়া জেলার আকাশ নয়

মানুষ শব্দটাতে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই

ঈশ্বর নামে কোন বড় বাবু এই বিশ্ব সংসার চালাচ্ছেন না

ধর্মগুলো সব রূপকথা

যারা এই রূপকথায় বিভোর হয়ে থাকে

তারা প্রতিবেশীর উঠোনের ধুলোমাখা শিশুটির কান্না শুনতে পায় না...

সুনীল গাঙ্গুলী বলেছেন,  মানুষ পরিণত হয় না। আমি বলি পরিণত হলেও স্বার্থান্বেষী কিছু ধড়িবাজ অপরিপক্কদের খরিদ্দার বানিয়ে ভূতের সান্রাজ্য চালানোর জন্য ছোটবেলায় দেখা বেদেদের ছেলেকে ভূতের ছানা বলে শেখা পণ্ডিতেও বড় হয়ে ছাদে বেড়ানো ছিঁচকে চোর ছেলেকে অথবা ভূতে ভীত ভৌতিক ভাবালুকে ভয় দেখাতে আসা অকুতোভয় ছেলেকেই ভূত ভূত বলে চেঁচায়। টিভিতে এসে  নিজের অপরিপক্কতার বিজ্ঞাপন দিয়ে বেড়ায়। এই সব কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সেলিব্রটিরাই কুসংস্কারের পালে হাওয়া দেয়। এরাই ভূতের কারবারিদের সমর্থন করে সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলে।

হায় ছেলেবেলার সেই ভূতগুলি আজ গেল কোথায়? ভূতেদের প্রধান শত্রু হ'ল ইলেক্ট্রিসিটি। দেশে ইলেক্ট্রিসিটি আসতেই বারো আনা পরিমান ভূত ম'রে হেজে গেল। যে সিকি ভাগ ভূত ছিল,  তারাও গাছ কাটার ফলে মুলুক ছেড়ে কোথায় যে গেল!

সব যে গেল তাও বলতে পারি না। খোদ কলকাতার বুকে ভূত দিদি, ভূতে বিশ্বাসী ক্রিকেটারের রক্তে এখনও ঘোরাফেরা করে ছোটবেলার সেইসব ভূতেরা।

ইলেক্ট্রিক আলোর থেকেও ভূতের আরো বড় শত্রু হ'ল জ্ঞানের আলো, বিজ্ঞানের আলো। যে সব লোকের জ্ঞানের জগতে আলোর প্রবেশ ঘটেনি, ভূতেরা সেখানে দিব্যি রাজত্ব করে চলেছে, এখনও। জ্যোতিষের মতো, ভূত নিয়েও চলছে বুজরুকি, জোচ্চুরি, ধান্দাবাজি, এক বিশাল কারবার। ধড়িবাজ কিছু ভণ্ড-পণ্ডিত, ধড়িবাজ কিছু খ্যাতিমান, ধড়িবাজ কিছু স্বার্থান্বেষী ক্রিকেটার, ধড়িবাজ কিছু ভূত- বিজ্ঞানী, -ধড়িবাজ কিছু গ্যাজেটধারী, ধড়িবাজ কিছু "যুক্তিবাদী”(যিনি আসলেই যুক্তিবাদীদের কলঙ্ক),  ধড়িবাজ কিছু ধর্মীয় নেতা হ' ল এই কারবারের সওদাগর। অ-বিজ্ঞানমনস্ক, ধর্মান্ধ, চিন্তারহিত বদ্ধমনা, কুযুক্তিবাদী অশিক্ষিত  হ'ল এই কারবারের খরিদ্দার।।

পৃথিবীতে যারা মিথ্যা গল্প বলে তারাও কারুর না কারুর বাবা মা। সূতরাং, যেহেতু

আমার বাবা, আমার মা  ভূত দেখার গল্প বলেছিল, কাজেই তা সত্যি, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। তা সেই বাবা,  সেই মা যত বড় ডিগ্রীধারী হোন না কেন, যতবড় ক্রিকেটার হোন না কেন, যতবড় "যুক্তিবাদী”হোন না কেন, যতবড় গ্যাজেটধারী বিজ্ঞানী বা যত বড় সুপার ন্যাচারাল অনুসন্ধানী ডিটেক্টিভ  হোন না কেন।  যতবড় ফিজিক্স-পড়া পণ্ডিত হোন না কেন। যত বড় আবিষ্কার করা নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হোন না কেন।  যতবড় ডিটেক্টিভ অফ সুপারন্যচারাল হোন না কেন, মিথ্যেটা মিথ্যেই। নিজের চোখে দেখাটাও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে দেখা নয়। প্রোথিত বিশ্বাসের আধারেই দেখা। যুক্তি গুলো আসলে কুযুক্তি। অন্ধবিশ্বাসের ভিতে গাঁথা সাবজেক্টিভ কাঠামোর কুযুক্তি।।

শৈশবের রিফ্লেক্স, শৈশবের অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে মানুষ পরিণত হতে পারে না, বড় হতে পারে না। আজীবন শিশু, আমরণ অপরিণতই থেকে যায়। নিজে চিন্তা করতে পারে না। যুক্তিবোধ গড়ে ওঠে না। বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠার জন্য যে যুক্তিবাদী চেতনার প্রয়োজন তার অভাব থেকে যায় মননে।  চিন্তন- অনুশীলণ-রগিত-জীবনশৈলী তাদের জীবনের পাথেয়। এরা চিন্তা করে সীমানার ভিতরে। সীমানার বাইরে যেতে পারে না। ধর্মের গণ্ডী পার হতে পারে না। মুক্তচিন্তার অভাবে অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি আসে না কোনোদিনই। বরং অচিন্তন তাকে গ্রাস করে। অন্ধবিশ্বাস আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তার মানবিকতাকেও।  মুক্তির জন্য মানবিকতা মাথা কুটে মরে অন্ধবিশ্বাসের রুদ্ধ-পাষাণ-দ্বারে।  অহরহ মানবিকতার বলী চড়ে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, মেকি-শিক্ষা, ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে।

সব শেষে, কবিগুরুর লিপিকা থেকে একটু কপি পেষ্ট করি।

"দেশসুদ্ধ লোক ভূতগ্রস্ত হয়ে চোখ বুজে চলে। দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, 'এই চোখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা। একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা। সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা এই চলা চলত; ঘাসের মধ্যে, গাছের মধ্যে, আজও এই চলার আভাস প্রচলিত।''

"শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তাতে অত্যন্ত আনন্দ পায়।"

"এই ভাবেই দিন চলত, ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে কারো মনে দ্বিধা জাগত না; চিরকালই গর্ব করতে পারত যে, এদের ভবিষ্যৎটা পোষা ভেড়ার মতো ভূতের খোঁটায় বাঁধা, সে ভবিষ্যৎ ভ্যা'ও করে না, ম্যা'ও করে না, চুপ করে পড়ে থাকে মাটিতে, যেন একেবারে চিরকালের মতো মাটি।"

"কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল বাধল। সেটা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীর অন্য দেশগুলোকে ভূতে পায় নি। তাই অন্য সব দেশে যত ঘানি ঘোরে তার থেকে তেল বেরোয় তাদের ভবিষ্যতের রথচক্রটাকে সচল করে রাখবার জন্যে, বুকের রক্ত পিষে ভূতের খর্পরে ঢেলে দেবার জন্যে নয়। কাজেই মানুষ সেখানে একেবারে জুড়িয়ে যায় নি। তারা ভয়ংকর সজাগ আছে।"

কিন্তু আমাদের সমাজে,

"খিড়কির আনাচে- কানাচে ঘোরে ভূতের পেয়াদা, আর সদরের রাস্তায়- ঘাটে ঘোরে অভূতের পেয়াদা; ঘরে গেরস্তর টেঁকা দায়, ঘর থেকে বেরোবারও পথ নেই। এক দিক থেকে এ হাঁকে, 'খাজনা দাও।' আর- এক দিক থেকে ও হাঁকে, 'খাজনা দাও।' "

“শিরোমণি- চূড়ামণির দল পুঁথি খুলে বলেন, 'বেহুঁশ যারা তারাই পবিত্র, হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি, অতএব হুঁশিয়ারদের প্রতি উদাসীন থেকো, প্রবুদ্ধমিব সুপ্তঃ।' "শুনে সকলের অত্যন্ত আনন্দ হয়।"

কিন্তু ব্যাপারটা এতটাই সোজা নয়।

মানুষ পড়বে না, বুঝবে না, ভাববে না।

চিন্তনশীলতা তাদের ধাতে সয় না।

তাই ভূত থাকে চিরকাল। ভবিষ্যতের পথ আগলে।।

ব্যবসা হবিবুল্লাহ -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 16, 2024 | যুক্তিবাদ | views:500 | likes:50 | share: 5 | comments:0

কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, এ গল্পের শিরোনামের মানে কি? 

তাকে অকপটে জানাই, আমি জানি না।

তাহলে এ লেখার এমন নাম দিলাম কেন?

এর একটা ইতিহাস আছে।

ইতিহাসটি হলো আমার পাশের গ্রামেই থাকে এক যুবক। বেকার। হ্যাঁ, এটাই ওর কাছে ওর বড় পরিচয়। কিন্তু আমাদের কাছে ও একজন যুক্তিবাদী। নানান ক্রাইসিসে মানুষের মাঝে যুক্তিবাদের প্রসারে আত্মনিবেদনকৃত। সাপের কামড়ে ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সচেতনতায়। জ্যোতিষীকে চ্যালেঞ্জে। জণ্ডিস তোলা, ডাইনির কু নজর,  জ্বীন ভূতের দাবীদারকে পাবলিকলি এক্সপোজ করার সাহসিকতায়। ভণ্ড গুরু পীরবাবাদের ভণ্ডামি উন্মোচনে। সব সময় সাথে পাবে ওকে।

কিন্তু বড় দুঃখের কথা। তাকে আজ দেখলাম এক ভিন্ন রূপে। সম্পূর্ণ বদলে গেছে সে। অর্থের নেশায় উন্মত্ত। 


সে এখন এক জ্যোতিষী। ঠিক জ্যোতিষী নয়,  জ্যোতিষ শাস্ত্র পড়া, "বিজ্ঞানভিত্তিক" পথপ্রদর্শক,   আসলে স্টোন বিক্রেতা। ডায়ামণ্ড, রুবি,এমর‍্যাল্ড,সাফ্যায়ার, ব্লু, পিঙ্ক, ইয়োলো। একই কাটিংয়ের কত নাম। সব ব্যবসা। মাছের মত সাইজ বাড়লে রেট বাড়ে, এরও তেমন, সাইজ আর খদ্দেরের সামাজিক স্তর সমানুপাতে দাম। খদ্দের যত শাঁসালো, ফাঁড়া তত বেশি, বিজ্ঞানের কপচানির সাথে লাভের অঙ্কের উচ্চলম্ফন। নিশ্চিত এক আয়ের পথ। 

আমি আশ্চর্য্য হয়েছিলাম। 

বাম নেতার রামের দলের পতাকা নিয়ে তাদের মিছিলে জয়শ্রীরাম স্লোগান দিতে দেখেও এত অবাক হই নি।

আমাকে দেখে ও লজ্জা পেল না, ভয় পেল না, সংকুচিত হলো না, পালিয়ে গেল না।

কাজেই তার কাছে গেলাম। কথা বলবো। কিন্তু আমার আগে ও-ই প্রথম শুরু করলে, আগুন ঝরা লেখাগুলো এখনো লিখে যেতেও পারি। কিন্তু যুক্তিবাদী আন্দোলনে জ্যোতিষ নিয়ে যা পড়াশুনা, অভিজ্ঞতা আছে, অন্ধবিশ্বাসীগুলোকে মুরগী করে স্টোন বিক্রি করে যাবো। এটাই আমার ব্যবসার রেসিপি। ধর্মান্ধ, আকাঠ, গবেট, বি. এ,  এম.এ, ডক্টরেট, ডিগ্রীওয়ালা শাঁসালো মাস্টার, প্রফেসার, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার ক্লায়েণ্টের বাড়ি গিয়ে জ্যোতিষের আফিং-এ আরো ডোজ বাড়িয়ে দু হাজারের স্টোন বিশ হাজারে বেচবো।

কারণ ব্যবসা হাবিবুল্লাহ।

এবার আমি সত্যি সত্যি কী বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না। 

সে-ই আমাকে বোঝালে, আসলে হয়েছে কী, আমার যে শেঠ,  তিনি বম্বের এক বড় জহুরি। আবার তিনি এক বড় মৌলানা,  ওয়াজি হুজুরও বটে। তার বেশ শাঁসালো মুরিদানও ( শিষ্যও) আছে। সেখানে ঢঙ একটু আলাদা। জমজমের জলে শোধিত আসল জেমসের আল্লাহ লকেট, আলী লকেটা, আয়েষা সুরমা। অনেকটা ঠিক হনুমান যন্ত্র বা দেবতার  বিভূতি। মুরিদানের বাড়ি ওয়াজও করেন,  ব্যবসায়ের জমিও চাঢ করেন। জাকির নায়েক ঢঙে। মুখস্থ টুখস্থ ভালোই করেছে। আমি নিজেও কোরাণের আয়াত টায়াত, সুরা টুরা মুখস্থ করে একটা পার্ফর্ম্যান্স দেখিয়েছি। একটা সিজনেই পঁচিশ হাজার থেকে লাখ খানেক,  কখনও বা লাখ দুয়েক আয়। হুজুরের কমিশন 20% থেকে লাভ অনুযায়ী 30%।  বাকিটা আমার। বড় কথা হল আমার বসই ওয়াজে কায়দা করে বাজারি স্টোন, জ্যোতিষের বিরুদ্ধে কোরাণের কত আয়েত ঝাড়লো। অথচ সে আর মারাঠী ব্রাহ্মণ,  এক ধর্মগুরু, মণিলাল,  জহুরি বাজারে  স্টোন মার্চেণ্ট দুনিয়ায় রাজ করে।  ডাইরেক্ট শ্রীলঙ্কা বা মাদাগাস্কারের মাইন থেকে জেমস এনে এখানে কাটিং করে। এর এক টুকরোও বাদ যায় না। সবচেয়ে ধনীর ঘরে যায় সবচেয়ে বড়টা, গরীব গুর্বো, ছাপোষার ঘরে যায় নিচে পড়ে যাওয়া কুড়ানো চুনীগুলো। ঠিক যেমন বড় ইলিশ খায় বড় লোকে, চুনোপুঁটি খায় ছাপোষায়। কিন্তু আমার বস আর মণিলাল জুটি গুরুগিরিও করে, ব্যবসাও করে।

তাকে কেউ এ বিষয়টা তুললেই পরিষ্কার বলে দেয়- " ব্যবসা হাবিবুল্লাহ।" আমি জানি না, এর মানে কী।

বড় লোকের বিটি! গান শিখেছে, টিভিতে দুবার গান টান গেয়ে দুটো হাততালি পেয়েছিল, আর তাকে কেউ কেন ডাকে না! দেখাও হাত, নাও একটা স্টোন। বাপের বহুদিনের কারবার, ইদানিং আউটপুট তেমন দেখতে পাচ্ছে না, বিশ্বস্ত লোকের রেফারেন্স পেলে সেখানেও দশ আঙুলে দশটা স্টোন সাজানোর প্রজেক্ট অবশ্যই নেওয়া যায়।

ব্যর্থ প্রেমের কেস গুলো একটু সিমপ্যাথি থেরাপির সাথে স্টোন দিলে তো দরদামই করতে হয় না।  জ্যোতিষ দুনিয়ায় এমনই হাজার এপিসোড। আর গরীব গুর্বো মধ্যবিত্তের দৌড় ঐ চল্লিশ পঞ্চাশ তক। তবে তাদের বাড়ি ঝাড় ফুঁক দোয়া তাবিজ করে পাঁচ দশ হাজার হাতানো একেবারেই রুটিন জব।

মাসে পঞ্চাশ ষাট  মার্জিন তো আছেই। একা পারি না, বিভিন্ন শহরে সেলার বসিয়েছি। কোনো কোনো বৎসরে কোম্পানির টার্ন কোটি ছাপিয়ে যায়।

কুসংস্কারের চাষে জল সার দিয়েই আমার আয়।

আমার পেশার ক্লায়েণ্ট ঐসব অন্ধ গবেটগুলো। ওরাই আমার রিসোর্স। আজ আমার বাড়ি, গাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালান্সের ওরাই যোগানদার। 


এবার

আমি একটা গল্প শোনালাম,   আমার এই হঠাৎ ধনী বন্ধুটিকে।

আবদুল্লা আল মাসুদ। ঢাকায় একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন এই মুফতি। কিন্তু সত্যকে উপলব্ধি করেছেন। জেনেছেন কোরাণ মিথ্যা।  মিথ্যার ভিতের উপর ধর্মের বিশাল ইমারত। জানালেন সে মিথ্যা। কিন্তু ধর্ম চিরকালই ভয় পায় আলোকে, সত্যকে। বরং বলা যায় সত্যের আলোয় তাদের অন্ধকার সাম্রাজ্য তছনছ হওয়ার ভয় সদা সর্বদা। তাই মস্তিষ্কবিহীন পাহারাদার সদা সর্বদা নিয়োজিত। সত্য যে বলতে চাইবে, ঘাড় থেকে তার মাথাটি কেটে নেওয়ার বিধান কার্যকর করার হাজার জেহাদি, হাজার মূর্খ, হাজার নীরবে-অন্যায়- সহ্য- করে- যাওয়া- জনগণ। এরা অভিজিৎকে মারে, বাবু ওয়াশিকুরকে মারে, অনন্ত বিজয়কে মারে, আরেফিন দীপনকে মারে, গৌরী লঙ্কেশকে মারে। হত্যা করে সাজাহান বাচ্চুকে, জাফর ইকবাল স্যারকে। হামলা করে আসিফ মহিউদ্দিনকে। হামলা করে রাফিদা আহমেদকে। হত্যা করে গোবিন্দ পানসারে, নরেন্দ্র দাভোলকার, এম এস কুলবার্গি, পাকিস্তানের খুররম আর কত নাম বলবো। সব তো জানিও না। নীলয় নীল কিংবা সাজাহান বাচ্চুকে তো দিনের আলোয় মারে। আসিফ মহিউদ্দিনকে দেশ ছাড়া করে। দেশছাড়া করে তসলিমাকে। 

কাজেই  সাজানো সংসার, সুখের সাম্রাজ্য ছেড়ে, মাতৃভুমি ছেড়ে পাড়ি দিতে হল মাসুদ ভাইকে অনিশ্চিত জীবনে পাশের দেশে। এলেন কলকাতায়। কী অসহনীয় একাকী নিরাপত্তাহীন জীবন। 

তবু তিনি বলে চলেন, " অদ্ভুত অন্ধকার চারিদিক। সেখানে এক ঝাঁক সাহসী তরুণ আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে চলেছে জোরকদমে। আমি তাদেরই একজন।"

এখানে সত্যকে পাথেয় করলে ধর্মান্ধরা খুনের চেষ্টায় থাকে।

তবুও তিনি অকপটে ঘোষণা করেন নিজের পরিচয়, আমি মানি না আল্লাহর অস্তিত্ব। জানালেন মিথ্যা কোরাণ, মুহাম্মদের মিথ্যাচার। আমি এক্স- মুসলিম। আমি ইসলামকে ত্যাগ করেছি, আমি মুরতাদ।

আর মুরতাদের জীবনকে দুর্বিষহ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে সমস্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধর্মান্ধরা।

তবু তিনি তার পথে অবিচল। শিরদাঁড়া এতটুকু নোয়াবার নাম নেই। এত অসহায়তার মাঝেও তিনি আওড়াতে পারেন  ম্যাক্সিম গোর্কির বাণী, " ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকবে আক্রোশের আগুন, আর তার তেজে বাঁকা এ মেরুদণ্ড সোজা হয়ে ওঠে"।

তার একটি গল্প শোনাই। মিজানুর আজহারি নামের তার এক সহপাঠী ছিল। সে এখন জাকির নায়েকের শিষ্য। থাকে মালয়েশিয়ায়। কোটি কোটি টাকার মালিক।

মাসুদ ভাই যদি চাইতেন, এই একাকীত্বের নিরাপত্তাহীন অসহায়ত্বের জীবন না কাটিয়ে এই রকম কোটি কোটি টাকার মালিক হতেন, কারণ আজহারির থেকে ইসলামিক জ্ঞানে পাণ্ডিত্যে মাসুদ ভাই অনেক উপরে। কিন্তু তিনি সুখের জীবন ত্যাগ করে বেছে নিয়েছেন সত্যের পথ, যে পথে প্রতি মুহুর্তে আছে

মৃত্যুকে আলিঙ্গন।। সত্য যে কঠিন। কঠিনেরে ভালবাসাই জীবন, মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে। তাহলে আর ভয় কিসের? 


এ গল্পের শেষটায় কিন্তু আমি নিজে আরও আশ্চর্য্যান্বিত।

বন্ধুটির সাথে বহুদিন যোগাযোগ রাখতাম না। ও তখন থেকে পাকাপাকি বম্বের বাসিন্দা। হঠাৎ এই কদিন আগে, মানে গত বৎসর লকডাউনের আগে একবার বাড়ি এসেছিল। আমার সাথে দেখা করতে এলো। এটা সেটা কথার পর জানালো, জানো ওসব বুজরুকির কারবার ছেড়ে দিলাম। আগে আমার যুক্তি ছিল, আমি স্টোন সাপ্লাই না করলেও অন্য কেউ তো করবেই, কারণ এর বাজার আছে, অন্ধবিশ্বাসী খরিদ্দার আছে। 

এখন ভাবলাম, যে করে করুক, আমি জ্যোতিষীদের আর স্টোন সাপ্লাই করবো না। অন্তত এ ব্যবসায়ের একটা সাপ্লায়ার তো কমলো! আর উদ্যোগ থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। কলকাতায় স্টোন-জুয়েলারি স্বর্ণ কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেছ? ওটার আমি ম্যানেজিং ডিরেক্টার। হাওড়া সন্ধ্যাবাজার, বড়বাজারে কলাকার স্ট্রীট, জোড়াসাঁকোয়, ক্যামাক স্ট্রীটে আর কাকুড়গাছিতে শোরুম দিয়েছি। ডোমজুড়ে একটা কারখানাও করেছি। 


আজ আমায় পাবে একাডেমির সামনে গজিয়ে ওঠা দরগা ভাঙার আন্দোলনে, মুক্তমনা হত্যায় রাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধে রাজপথ অবরোধে, যুক্তিবাদী আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায়। 


ও তো বকবক করছিল। আমি দেখলাম একটা ছেলে ঠিক আলোর বৃত্তে ফিরে এসেছে।

আমি বললাম, কিন্তু ঐ যে বলছিলে, মনসুর হবিবুল্লা না কী যেন?

হো হো করে অট্টহাস্য দিয়ে বললে, মনসুর হবিবুল্লাহ নয়, ব্যবসা হবিবুল্লাহ। কিন্তু প্লিজ, এখনও মানে জিজ্ঞেস কোরোনা।

যুক্তিবাদ ও মানুষের মুক্তি -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 16, 2024 | যুক্তিবাদ | views:567 | likes:2 | share: 2 | comments:0

মানুষের উত্তরণের সুচক হলো, পৃথিবীর দরিদ্রতম থেকে দরিদ্রতর দেশে বসবাসকারী সাধারণ থেকেও অতি সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সর্বাধিক সুবিধা লাভের সুযোগের ব্যবস্থা করা গেছে কি না, কতটা করা গেছে।

কিভাবে এই ব্যবস্থা উপলব্ধ করা যেতে পারে বলে মনে হয়? সকলেই বলবেন প্রকৃতির রিসোর্সের উন্নততর বণ্টন ব্যবস্থা রূপায়নের জন্য পুঁজিবাদের খলনলচে পাল্টিয়ে দিয়ে সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা।  উত্তরটিকে অনেকেই বস্তাপচা বলে অভিহিত করেন। আমরা মনে করি,

এটা তো হল বিপ্লব। বহু বছর কেটে গেছে, বহু বিপ্লব ঘটেছে, কিন্তু স্বপ্নের সেই ব্যবস্থা আজও প্রণীত হয় নি। যতদিন সেই সাম্য প্রতীষ্ঠা না হচ্ছে, ততদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মাঝেই তাই আমাদের পথ খুঁজতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সেই পথ হলো সংগ্রামের পথ। আন্দোলনের পথ। রাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টির এটাই পথ।

পুঁজিবাদী কাঠামোয় রাষ্ট্র পুঁজিপতিদেরই স্বার্থে সব কিছু করবে। মেহনতি মানুষ সেখানে শ্রমের যোগানদার বই ভিন্ন কিছু নয়।

কিন্তু মেহনতি মানুষ তাদের শ্রম কেন পুঁজিবাদীর স্বার্থে যুগিয়েই যাবে যুগিয়েই যাবে অবিরাম?

কারণ তাদের ব্রেন এভাবেই প্রক্ষালিত।

যুক্তিবাদের প্রসারে এই মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধিতা দূরীভুত হতে পারে, তারা রাষ্ট্রের এই পুঁজিবাদ সেবার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে। আন্দোলন জারি রাখতে পারে সার্বিক ক্ষেত্রে।

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন লোকে মুক্তচিন্তায় আগ্রহী নয়। 

পুঁজিবাদ ছাড়াও ভিন্ন রাষ্ট্র কাঠামো গড়া যেতে পারে, অন্তত পুঁজিবাদের লাভ দু আনা লোক না পেয়ে বারো আনা পরিমাণ লোকের স্বার্থে আসবে,  এমন ব্যবস্থাও যে গড়া সম্ভব, তা তারা মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।

আমাদের সমস্ত শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান,  দর্শনের ফোকাসে থাকে এক বদ্ধমনা চেতনাঃ পুঁজিবাদের বিকল্প কাঠামো  রাষ্ট্র কোনোদিন আয়ত্ত করতে পারবে না। তাই বিপ্লব তো দূরের কথা সংগ্রাম আন্দোলনেই 'শিক্ষিতজন' এর সমর্থন পাওয়া দুরূহ। তারা বরং তাতে বাধা দেয়। এমনকি তাদের ব্রেন এমনভাবে প্রক্ষালিত যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রেও রাষ্ট্রীকরণ অপেক্ষা বেসরকারীকরণেই তাদের উদ্দীপনা বেশি লক্ষিত হয়।

মানুষ ভিত্তিগতভাবে পশু। অনেক পশুর ন্যায় নিজ স্বার্থসিদ্ধিতেই বেশি আগ্রহী। আবার মানুষ শুধুই পশু নয়, র‍্যাশান্যাল পশু। তার মাঝে পশুত্ব যেমন থাকে,  তার মাঝে র‍্যশানালিটিও থাকে। কথা হচ্ছে কোন গুণটি কোন গুণটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মাঝে যখন র‍্যাশানাল ভাব বেশি থাকে তাহলে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, স্বার্থপরতা, অন্ধ অনুসরণেচ্ছা, সামগ্রিক মানবসমাজে থেকেও শুধুমাত্র সম্প্রদায়গত ঋণাত্মক চিন্তা ভাবনাগুলিও সমহারে কমতে থাকে। এটিই প্রকৃত শিক্ষা। যে শিক্ষায় সাম্প্রদায়িক চেতনার ঊর্দ্ধে ওঠা যায়, সামুদায়িক স্বার্থের জন্য কাজ করাকেই প্রকৃত কাজ ভাবা যায়, তার মাধ্যমে মানবিকতার বিকাশ ঘটানো যায়,  সেটিই প্রকৃত শিক্ষা।

যে যত ডিগ্রীর অধিকারী হোন না কেন, তিনি যদি বাস্তব থেকে অলৌকিকে বিচরণ করেন, তাঁকে শিক্ষিত বলা যায় না। বিকশিত মনুষ্যত্ব আধিদৈবিকতা, আধিভৌতিকতার পথ থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির ত্বরণ জারি রাখে। মানুষকে বাস্তবিক মাটিতে বিচরণ করতে উদবুদ্ধ করে। 

যারা বাস্তব বোধের অধিকারী তারাই মানবমুক্তির পথনির্দেশ করতে পারেন। তার স্পষ্ট অর্থ হলো, ধর্মীয় দর্শণ কখনই মানুষের মুক্তির কথা বলতে পারে না। তারা প্রথমেই মানবমুক্তির ডেফিনিশন পাল্টে দেয়। তাদের মানব মুক্তির লক্ষ্যে থাকে বার বার জন্মগ্রহণ বা পাপ পূণ্য-জনিত উদ্ভট সমস্যার উদ্ভব করে তার মনগড়া সমাধান। মানবমুক্তির মূল অর্থ সকলের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক  সুযোগ লাভের আনুপাতিক বিকাশ।

র‍্যাশান্যাল মানুষ প্রতিনিয়ত মানবমুক্তির মাইক্রো আন্দোলনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেকে সাধ্যানুযায়ী নিয়োজিত রাখেন। 

মানুষের মুক্তির পথ সুগম করতে  যুক্তিবাদের প্রসার তাই অত্যন্ত জরুরী।

উত্তরণের পথে ধর্ম সদা সর্বদা প্রতিবন্ধক।

এই প্রতিবন্ধকতাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে পারে কুসংস্কারমুক্ত মানুষ। ধর্মান্ধের দ্বারা তা আদৌ সম্ভব নয়।

যুক্তিবাদের সিঁড়ি বেয়েই মানব সমাজের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব।

নারী শক্তি -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 9, 2024 | নারী | views:1044 | likes:1 | share: 1 | comments:0

ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম। ট্রেনে এক দম্পতি চলেছেন। সামান্য মতান্তরে স্বামী চড় মারলেন স্ত্রীকে। প্রকাশ্যে। কোনোপ্রকার ইতস্তত না করে। যেন এ অত্যন্ত এক স্বাভাবিক ঘটনা। বুঝতে এতটুকু কষ্ট হয় না এই প্রহার তার অভ্যাসবশত। সহযাত্রীরাও নির্বিকার। তারাও এটিকে স্বাভাবিক হিসাবেই নিয়েছেন। কোনো প্রতিবাদ নেই। নীরবে মার খাচ্ছেন এক নারী। এই নির্যাতন সমাজের গালে সপাটে এক চড়। অমানবিকতার ভিতে গড়া এই সমাজে বোধহয় এটি বিশেষ অকাম্য নয়। ধর্ম তাদের এই জীবন বিধান দিয়েছে। এতে তারা লজ্জা পায় না, গর্ব অনুভব করে।১ তাই আমরা নিয়োজিত হয়েছি এই সমাজের ধর্ম ভিতকে উৎপাটিত করে যুক্তি নির্ভর বাস্তব ভিত গড়ে নতুন সমাজ রচনার কাজে। স্ত্রীকে প্রহার। ধর্ম অনুমোদিত জীবন বিধান। নির্লজ্জ সগর্ব প্রকাশ্য ব্যবহার।

কোরাণে এই প্রহার বিষয়ে যা মত দিয়েছে তা নিয়ে কেউ জানতে চাইলে নিম্নের লিংকে যেতে পারেন।২ এখন ঘটনা হচ্ছে পুরুষ ধর্ম ধর্মগ্রন্থ রচনার মাধ্যমে নারীর উপর প্রভুত্ব খাটানোর প্রচেষ্টা করেই চললেও, ব্যতিক্রমী কিছু নারী আছেন, তারা পুরুষের এই নিয়ম মানেন না। প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। নিচের লিংকে দেখবেন স্ত্রী তার স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের প্রতিবাদে বাসেই স্বামীকে প্রহার করছে।৩

দুটি ছেলেমেয়ে বন্ধুরূপে মিশছে। কিন্তু সীমারেখা অতিক্রম, যেখানে বলপ্রয়োগের ঘটনাও দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে নারী আত্মসম্মানী, প্রতিবাদী। আমার বাড়ির কাছে রেল স্টেশনে বিকালে হাঁটতে যাই। একদিনের ঘটনা। দুটি ছেলে মেয়ে। কাছেই এক পলিটেকনিক কলেজ আছে। সেখানে কিছু খোঁজখবর নিতে এসেছিল। সেই সুত্রে দুজনের আলাপ পরিচয়। যাবেও একই ট্রেনে। প্লাটফর্মে বসেছিল। প্লাটফর্মে আলো খুবই অল্প। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। প্লাটফর্ম ফাঁকাই ছিল। হঠাৎ দেখি মেয়েটি ছেলেটিকে মারছে। দ্রুত গেলাম তাদের কাছে কয়েকজন। জানা গেল, পরিচয়ের সুবাদে ছেলেটি কিছু খারাপ আচরণ করেছে। মেয়েটি তা হজম করে নেয় নি। তার পারিবারিক শিক্ষা, এসব ক্ষেত্রে কখনই আপোশ নয়, এভাবেই জবাব দিতে হয়। মেয়েটির স্বাভিমানকে সকলেই স্যালুট জানালো। একেই বলে নারীশক্তির জাগৃতি। অনেক পরিবারেই এই শিক্ষা দেওয়া হয়।

অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলার শিক্ষা যে পরিবার দেয়, সমাজ গঠনে সেই পরিবার জমি প্রস্তুতির কাজটি করে দেয়।

অন্যায়কে মেনে নেওয়ার শিক্ষা কখনই সুশিক্ষা হতে পারে না। দেশ গঠনে নারি শক্তির ক্ষমতা যে কী অপরিসীম তা আজ দিল্লী সীমান্তে কৃষিবিরোধী পঞ্জাবের মেয়েরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। সমাজে যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠায়, প্রসারে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি অর্থবহ। আংটি মাদুলির সগর্ব প্রকাশে অশিক্ষা কুশিক্ষায় ছেয়ে যাওয়া সমাজে বস্তুবাদী চিন্তনের বড় প্রয়োজন।

পুরুষতন্ত্র কায়েম করার জন্য দরকার হয় ধর্মের। নারীকে পুরুষের অঙ্গুলিহেলনে চালাতে সকল ধর্মের নানান নিয়ম কানুন। পাখী যেমন খাঁচায় থাকতে থাকতে উড়তে ভুলে যায়, সমাজে পোষমানা নারীও তাই ভুলে গেছে তার মাঝের শক্তিকে। সে দেখেই নি নারী শক্তি। তাই কোনো নারী যখন এই জেগে উঠে এই পুরুতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তখন পুরুষতন্ত্রের ধারক- পুরুষের সাথে বহু বহু নারীও সোচ্চার হয় তার কণ্ঠ থামিয়ে দিতে। পুরুষতন্ত্র বিরোধী পুরুষদেরও ব্যাঙ্গ বিদ্রূপের শিকার হতে হয়।

ইসলামে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে তাদের পুনরায় ঘর সংসার করতে হলে স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করে ঘর করতে হয়, নতুন স্বামী তালাক দেয়, তারপর সে নিজ স্বামীর কাছে যেতে পারে। এই বিয়েকে বলা হয় হিল্লা বিবাহ।৪

নীচের লিংকে নারী বিষয়ক ৩. 0 এর মধ্যে ৩.১ নারী অবমাননা হিল্লা বিবাহ অংশ দেখতে পারেন।৫

মুর্শিদাবাদের আসমা বিবি এক খেটে খাওয়া নারী। তার স্বামী তিন তালাক দিলে, মোল্লারা তাকে হিল্লা বা মুতা বিবাহের ফতোয়া দিলে সে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলে, আমার কি মান সম্মান নেই? পর পুরুষের সাথে আমি থাকবো না। কোরাণ হাদিসের এসব আইন আমি মানি না। মোল্লাদের সাথে মুসলিম মেয়েরাও তার বিরুদ্ধে যায়। প্রত্যাশিত ছিল অন্তত 'শিক্ষিত' মেয়েরা তাকে সমর্থন করে তার পাশে দাঁড়াবে। আসমা জানতো না তসলিমাকে বিতাড়িত করেছে বাঙলাদেশের মোল্লারা, বাঙলাদেশের সরকার, তসলিমাকে রাতের আঁধারে কলকাতা থেকে দিল্লীর ঘাড়ে ফেলে দিয়েছিল সি পি এম সরকার। প্রত্যাশা করেছিলাম মোল্লাদের থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে বামফ্রণ্ট সরকার।

পুরুষতন্ত্র কিভাবে তার শিকড় বিস্তার করেছে রাজনীতির সাম্রাজ্যে। রাজনীতি সেই আন্দোলনে সমর্থন দেবে না, যদি হও একলা। তাই আসমাকে সহ্য করতে হয় সমাজের নির্যাতন। তবু ভাঙে না। একেই বলে নারী শক্তি।


লিংকগুলি-

১) https://youtu.be/Jh6Q5LeAoTA

২) https://www.google.co.in/amp/s/www.shongshoy.com/archives/13370

৩) https://youtu.be/rJNCCoRLLpU

৪) https://www.google.co.in/amp/s/www.shongshoy.com/references/islam

৫) https://www.google.co.in/amp/s/www.shongshoy.com/references/islam (হিল্লা বিবাহ)


যুক্তিবাদ ও মননশীলতা -
মহম্মদ মহসীন
Nov. 8, 2024 | যুক্তিবাদ | views:276 | likes:25 | share: 21 | comments:0

যুক্তিবাদী হওয়ার জন্য বি.এ, এম.এ পাশের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। যাদের বাস্তব বোধ আছে তারাই হতে পারেন যুক্তিবাদী। যারা খোলা মনে অন্যের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করেন যুক্তিবাদী মানসিকতা গড়ে ওঠে তাদের মাঝে। বৈজ্ঞানিক মানসিকতা গঠনের জন্য বিজ্ঞান পড়তে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, বিজ্ঞানী হওয়ার তো কথাই আসে না। আমার জীবনের কয়েকটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা আজ সকলের কাছে রাখতে চাই। 

খুব ভোরে হাঁটা আমার বহু দিনের অভ্যাস। হেঁটে যেতাম বাড়ি থেকে দেড় কিমি দূরে রেল স্টেশনে। তার পাশে ধান জমি। অত ভোরেই একজন পাম্পসেট চালিয়ে সেচ দেবার যোগাড় যন্ত্র করছে। আমাকে দেখে ডাকলো। কৌতূহল নিয়ে কাছে গেলাম। “শুনেছেন কাল রাতে  নরেনকে (নাম পরিবর্তিত) সাপে কেটেছে। আর তাকে নিয়ে চলেছে বজরং (নাম পরিবর্তিত) ওঝার কাছে। আমি তো রেগে মেগে হুলুস্থুল করলাম, শেষে ওঝাবাড়ি বাদ দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ইনজেকশন দিয়েছিল, আজ ভালো আছে। আরেকটু দেরী হলে কলকাতা নিয়ে যেতে হতো, ডায়ালিসিস করতে হতো, তাও বলা যায় না, কী যে হতো বলা যায় না। ”

এই কৃষকটি প্রায় আশি ছুঁই-ছুঁই। জীবনে স্কুলের মুখ তো দেখেই নি। আর মুক্তমনা-যুক্তিবাদী এসব কথাও শোনে নি। কিন্তু তার মানসিকতা বৈজ্ঞানিক। অভিজ্ঞতার নিরিখে সে বুঝেছে, ওঝা নয়, সাপে কাটলে হাসপাতাল যেতে হয়। আমি অবাকই হয়েছিলাম। কারণ এখন অনেক ডিগ্রীওয়ালা শিক্ষিতকেও ওঝাবাড়ির শরণাপন্ন হতে দেখি আকছার। গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ে পড়তে আসে। মাঝে মাঝে কথার পিঠে কথায় তাদের যুক্তিবাদের বহিঃ প্রকাশ দেখতে পাই। ধর্ম প্রসঙ্গ আসে, বলি তোরা জানিস কোরাণ কে লিখেছে? একবাক্যে সবাই বলে মোহাম্মদ লিখেছে। অথচ তাবৎ বিশ্বের মুসলমানে বিশ্বাস করে ওটা মোহাম্মদ নয় স্বয়ং আল্লাহর রচনা। এই জলজ্যান্ত অবাস্তব কথাটি বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়। হায়! একটা নাইন টেনের ছেলে-মেয়ের বোধ বুদ্ধিও যদি তাদের থাকতো!

এক রেডিও মিস্ত্রি অর্শের যন্ত্রণায় ভুগছেন। তিনি দৈব, টোটকা এবং গাঁয়ে ঘরের আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করান। রক্তপাত হয়ে হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার কথা, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, পাঁচশ' টাকা ফি দিয়ে হাজার হাজার টাকার ওষুধ খেয়ে শেষ হয়ে গেছি। আর খরচায় কুলিয়ে উঠতে পারছি না। ও আমার টোটকাই ভালো। তাতেও উপশম পাই না, সরকারী হাসপাতালে তো করোনা ছাড়া কারুর গুরুত্ব নেই। শুনছি জানুয়ারীতে ইমামবাড়া হাসপাতালে এক ডাক্তার আসছে, তাকেই দেখাবো। করোনা নাহলে ওয়ালসে অপারেশন হয়ে যেত। 

-তবে এখন যে দৈব খাচ্ছি, তাতে ভালো হয়ে যাবে বলছে। 

-ভালো হবে বলে কিছু বুঝছেন?

-এখন পর্যন্ত কোনো উপকার হয় নি, তবে যে আমাকে সন্ধান দিয়েছে তার ভালো হয়ে গেছে। 


আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়াটাও দৈব, টোটিকা, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি করার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারী উদ্যোগ যথেষ্ট হলে, ঘরে ঘরে আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দিতে পারলে এইসব অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার রমরমা অনেকটাই কমে যেত। গ্রামের এক যুবক সর্পদষ্ট হয়। ওঝার বাড়িতে মরতে বসেছিল, কয়েকজন জানতে পারি। ধরে বেঁধে এন আর এস এ নিয়ে যাওয়া হয়। গিয়ে বেশ কয়েকবার ডায়ালিসিস করে এখন পুরো সুস্থ। কিন্তু রাস্তার ধারে একটি গাছের তলায় পাকা বেদী বানিয়ে নিয়মিত মনসা পুজো করে। তবে একটা কাজ সে করে, কাউকে কোনো সাপ মারতে দেয় না। আমার আরেক আত্মীয়কে সাপে কাটলে চুঁচুঁড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দেখি আরেক আত্মীয় জলপড়া নিয়ে গেছে। অর্থাৎ আধুনিক চিকিৎসার সাথে সাথে দৈবও চালাচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালেই দেখবেন একটা করে ধর্মস্থান তৈরী করে রেখেছে, আয়ও তার চোখ টাটানোর পক্ষে যথেষ্ট। 

অন্যরকম যুক্তিবাদী মনের অশিক্ষিত, স্বল্প-শিক্ষিত লোককেও দেখেছি। আমাদের রেল স্টেশনে আছে একটি চায়ের দোকান। নীলমাধব। মাধ্যমিক দিয়েছে কি না জানি না। তবে একটা কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গী আছে, তাই দোকানের সাইন বোর্ড বেশ লম্বা। তাতে লিখেছেঃ নীল আকাশের নীচে, নীল মাধবের চা। একদিন সকালে দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। গান বাজছিল-

"শত জনমের কত সাধনায়

পেয়েছি এ মানব প্রাণ,

ওগো ভগবান ওগো দয়াময়

আমি যে তোমারি দান"। 

শুনলাম নীলমাধব তর্ক করছে, জন্মান্তর বলে কিছু হয় না। তাই অন্য জন্মের পূণ্যফলে মানব জন্ম হয়, এ মানা যায় না, এটা ঠিক নয়। তাছাড়া, জন্ম জন্মান্তরের সাধনায় যদি মানব জনম পাই, তাহলে আগের জন্মে নিশ্চয়ই মানব জনম পাই নি। আগে কি গরু ছাগল হয়ে সাধনা করছিলাম? সাধনা তো মানুষেই করে। তো আগের জন্মেই যদি মানুষ হয়েই সাধনা করে থাকি, তাহলে এ মানব জনম ভগবানের দান হয় কিভাবে? পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, এমন প্রশ্ন আর কেউ করে না কেন? অনেক ধর্মান্ধ লোকের মাঝেও মানুষের গুণ দেখেছি। এক সব্জি বিক্রেতা দেখা হলেই আমার শরীর ভালো আছে কি না, বাড়ির সকলে কে কেমন আছে, জিজ্ঞাসা করে। আমাকে শুধু নয় সকলকেই এটা জিজ্ঞাসা করে। একদিন তারও দোকানে খদ্দের নেই, আমারও সময় কাটানোর কেউ নেই। তার সাথেই আড্ডা দেব ভাবলাম। বেশ দাড়ি রাখে। পাঁচবার নামাজও পড়ে। কথায় কথায় বললাম, কোরাণে কত বাজে কথা লেখা আছে জানো? লেখা আছে অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব করা, ওঠা বসা নিষিদ্ধ।  সে তো এর তীব্র প্রতিবাদ করলো। 

“কিছুতেই এটা থাকতে পারে না। কোরাণে নানান সুরা আছে, আয়াত আছে। এসব কেন লেখা থাকবে?”

আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র নই, মোবাইলে কোরাণ খুলে দেখাই। সে বলে, মোবাইলের কোরাণ মানি না। ওটা কোরাণ নয়। বললাম, তাহলে বাড়ি গিয়ে তোমার কোরাণ খুলে দেখে নিও, না পেলে আমাকে ডেকো। 

সে কী বললো জানেন?  

-আমি তো লেখা পড়া জানি না। তবে আমার মনে হয় কোরাণে এসব বাজে কথা লেখা থাকতে পারে না। 

অতঃপর তাকে ধরলাম অন্য বিষয়ে। 

-এই যে বলে বুরাখ চেপে নবীজি সাত আকাশ উড়ে মেরাজ করেছিল, এটা মানো? 

সে বলে, ‘অবশ্যই মানি’। 

- তাহলে বলো কিভাবে বুরাক আকাশে উড়তে পারে? সেটি তো গাধা আর খচ্চরের মাঝামাঝি ডানাওলা এক প্রাণী। সে কখনও মহাকাশে যেতে পারে? 

সে বলে, ‘এই মেরাজটা তো বাস্তবিক সম্ভব নয়। আসলে এটার ভিতরে বিশাল অর্থ আছে। পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা, আধ্যাত্মিক। বাস্তবিক নয়। ’ 

এরা ধর্ম বিশ্বাসী। তবু তাদের কথা বলছি কেন? কারণ তারা ধর্মগ্রন্থকেও পুরো বিশ্বাস করে না। অবাস্তব গুলোকে আধ্যাত্মিক বলে সন্তুষ্ট হতে চায়, কারণ তারাও বোঝে বাস্তবে তা হওয়া অসম্ভব। বাস্তববোধ তাদের আছে। তাই তাদের মাঝে কিছুটাও প্রশ্ন করার মানসিকতা জাগে। তাদের মাঝেও যুক্তিবাদের স্ফুরণ সম্ভব। মানুষ স্বভাবতই যুক্তিশীল। যুক্তিযুক্ত বিষয় তার মনে ধরে। বাস্তবজীবনে তার প্রয়োগও করে। তাই অতিবড় অযৌক্তিক বিষয়কেও কুযুক্তি দিয়ে যুক্তির ছদ্মবেশে বিজ্ঞানের মোড়কে খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় অলৌকিকতা নির্ভর ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929